Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

‘চুপ, আমি এমএলএ-র জামাই!’

তবে তা নিয়ে তেমন শ্লাঘা নেই তাঁর, বরং স্কুল থেকে চায়ের দোকান— সর্বত্রই নিজের প্রথম পরিচয়টুকু দিয়েই বাড়তি কদরের খোঁজ করেন বলে অভিযোগ। স্কুলের সহ-শিক্ষকেরা তাই বলছেন, ‘ফলও মেলে তাতে, তাঁর সাত খুন মাফ!’ 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মৃণ্ময় সরকার 
লালগোলা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

তিনি প্রাক্তন বিধায়কের জামাই। অন্য একটা পরিচয়ও রয়েছে তাঁর, শিক্ষক।

তবে তা নিয়ে তেমন শ্লাঘা নেই তাঁর, বরং স্কুল থেকে চায়ের দোকান— সর্বত্রই নিজের প্রথম পরিচয়টুকু দিয়েই বাড়তি কদরের খোঁজ করেন বলে অভিযোগ। স্কুলের সহ-শিক্ষকেরা তাই বলছেন, ‘ফলও মেলে তাতে, তাঁর সাত খুন মাফ!’

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সরিয়ে চেয়ার দখল করে তিনি তাই অনায়াসে হাঁক পাড়েন, ‘‘কোথায় অন্যায়, প্রমাণ করুন দেখি!’’

ভগবানগোলার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক চাঁদ মহম্মদের সেই জামাই জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ জমা পড়েছে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে।

লালগোলা দক্ষিন চক্রের ডিহিপাড়ার খাদেম আলি মেমোরিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই স্কুলে প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক আব্দুর রেজ্জাক। অভিযোগ, তাতে প্রথমেই আপত্তি জানিয়ে ছিলেন জাহিদুল। মাস খানেকের মধ্যেই আচমকাই তিনি ঘোষণা করেন, তিনিই আপাতত প্রধানশিক্ষক!

আরও পড়ুন: ভোটার কার্ড জাল, দিব্যি বিক্রি জমি

তার জেরেই কখনও বরখাস্ত করেছেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের। স্কুলের নোটিস বোর্ডে লটকে দিচ্ছেন নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি।

জাহিদুলের এমন তুঘলকি হালচাল কানে গিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতরের পরিদর্শকেরও। ডিআই মুর্শিদাবাদ পুরবী দে তাই বলছেন, ‘‘ওই শিক্ষক অন্যায়ভবেই দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁকে সরকারি কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ নিয়ম অনুযায়ি প্রধানশিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই।’’ ডি আই জানিয়ে দিয়েছেন, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি জারি তিনি করেছেন তাও নিয়মের বাইরে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সহকারী পরিদর্শকের কাছে জবাবদিহিও চেয়েছেন তিনি। ডিআই বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এস আই’কে বহুবার আমি এসে দেখা করতে বলেছি, তিনি কনো উত্তরই দেননি।’’ তবে স্থানীয় এসআই, দীপঙ্কর রায়ের একটাই কথা, ‘‘ আমি কোনও কথা বলব না।’’

তবে চাঁদ মহম্মদ তাঁর জামাইয়ের কোনও দোষ দেখছেন না। তাঁর সার্টিফিকেট, ‘‘জাহিদুল অন্যায় কিছু করছে না ওঁর কাছে এসআই-এর নির্দেশ আছে বলেই জানি।’’

পাঁচ বছর আগে ওই বিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম, অভিযোগ তারপর থেকেই নানা আরাজকতার সৃষ্টি করছেন। তাঁকে সতর্ক করতে গেলেই মেলে পাল্টা হুমকি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেই তিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন স্কুলের দুই চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক গোলাম রাইহান ও মহম্মদ ডালিম নামে শিক্ষককে।

ওই দুই শিক্ষকের অভিযোগ, জাহিদুলের হুমকি ছিল, ‘মৌখিক ভবে আপনাদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল, মৌখিক ভবেই বললাম, বেরিয়ে যান।’ ওই স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ ডালিম বলছেন, ‘‘ওঁকে কিছু বলতে গেলেই শুনতে হয়, ‘চুপ, আমি কোনও অর্ডার মানি না, আমি এমএলএ’র জামাই।’’ তা হলে? জাহিদুল অবশ্য মুচকি হেসে চেনা ভঙ্গিতে বলছেন, ‘‘আরে ভাই, আমার কাছে এসআই-এর নির্দেশ রয়েছে। যা করার নিয়ম মেনেই করছি, অন্যায় কোথায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher Son-in-Law TMC Complaint MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE