Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাইরে জুলুম, অন্দরে কোন্দল শাসক দলের

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তোলা ও জমার কাজ শুরু হয়েছে সবে দু’দিন হল। চলবে ৯ এপ্রিল বেলা ৩টে পর্যন্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫১
Share: Save:

কথাতেই বলে, জোর যার মুলুক তার। কিন্তু জোর বেশি হয়ে গেলে যে ডান্ডা নিজের মাথাতেও পড়তে পারে, তার প্রমাণ মিলছে শাসক দলের রকমসকমে।

যেখানে বিরোধী দলগুলির প্রার্থী দাঁড় করানোর ক্ষমতা আছে, সেখানে মারধর-হুমকি, ব্লক অফিস ঘিরে রেখে মনোনয়ন জমার পথ বন্ধ করা — তৃণমূল আপাতত এই কৌশল নিয়ে চলছে বলেই অভিযোগ। অথচ যেখানে বিরোধিতার কাঁটা তেমন নেই, সেখানে তাদের পায়ে বিঁধছে গোষ্ঠী কোন্দলের চোরকাঁটা।

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তোলা ও জমার কাজ শুরু হয়েছে সবে দু’দিন হল। চলবে ৯ এপ্রিল বেলা ৩টে পর্যন্ত। সোম ও মঙ্গলবার যত জুলুমের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে, বুধবার তার চেয়ে কম। দুপুরে বহরমপুর ব্লক অফিসে কংগ্রেসের দু’জনের ভোটার পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য পুলিশ সেগুলি উদ্ধার করে দেয়। এর বাইরে দুই জেলায় গোলমাল তেমন ঘটেনি। যদিও চোরাগোপ্তা হুমকি বা ব্লক অফিসে ঢোকার মুখ আটকে রাখা চলছেই।

গোলমাল বরং বেধেছে তৃণমূলের অন্দরেই। প্রার্থী নির্বাচনে তাঁর মতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন ধানতলার আড়ংঘাটা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি শিশির সেন। আড়ংঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তিনি। প্রার্থী বাছাই নিয়ে যুব তৃণমূল সভাপতি শান্তনু লস্করের সঙ্গে তাঁর বিবাদ প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

শিশিরের অভিযোগ, “কোনও নিয়ম মানা হচ্ছে না। যুব সভাপতি ইচ্ছে মতো প্রার্থী ঠিক করছেন। দলের অনেকেই সেটা মানতে পারছেন না। কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ব্লক সভাপতি এবং বিধায়কের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।” রানাঘাট ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাঞ্জন গুহঠাকুরতা অবশ্য বলেন, “আমি এখনও কোনও পদত্যাগপত্র পাইনি।”

ঘটনাচক্রে, শিশির ও শান্তনু দু’জনেই রানাঘাট উত্তর পূর্বের বিধায়ক সমীরকুমার রায়ের ‘কাছের লোক’ বলে পরিচিত। শান্তনু পাল্টা বলেন, ‘‘আমার ইচ্ছায় নয়। দলের নিয়ম ও নির্দেশ মেনে আমরা প্রার্থী ঠিক করছি।” কার্যত তাঁকেই সমর্থন জানিয়ে বিধায়ক বলেন, “এখানে শান্তনুর ভুমিকা নেই। শিশিরই প্রার্থী ঠিক করছে। তাকে একটি বুথে প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। যে বুথ সে পছন্দ করেছে, সেখানে গত বারের নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। শিশিরকে অন্য বুথে প্রার্থী হতে বলা হয়েছে। এর বেশি কিছু হয়নি। মিটে যাবে।”

মুর্শিদাবাদে বিরোধীদের কিছু শক্তি এখনও থাকায় ছবিটা ঈষৎ ভিন্ন। গত দু’দিনের মতো এ দিনও ডোমকল, জলঙ্গি, রানিনগরে লাঠি হাতে ব্লক অফিস ‘পাহারা’ দিয়েছে তৃণমূল। বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে এলে সটান ফেরত পাঠানো হয়েছে। ব্লক অফিসের সামনে থেকে দলীয় কর্মীদের ভিড় হটাতে দুপুরে পুলিশ নিয়ে নামতে হয় রঘুনাথগঞ্জ ১-এর বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমানকে। হরিহরপাড়া ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মীর আলমগিরের অভিযোগ, “গ্রামে গ্রামে শাসানি চলছে।”

মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাসের অভিযোগ, কান্দি, ভরতপুর ২ ও বড়ঞায় শাসক দলের লোকজন ব্লক অফিস ঘিরে রেখেছে। জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাসের দাবি, “ওদের মনোনয়ন দেওয়ার মতো লোকই নেই, তাই মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। কোথাও কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Group Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE