Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জওয়ান স্মরণেও গোষ্ঠী-কাঁটা

গত কয়েক দিনে বিজেপির ডাকে জেলার দক্ষিণাংশে কয়েক জায়গায় মিছিল হয়েছে। কিন্তু যেখানেই জেলা সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক হাজির বা অমন্ত্রিত হয়েছেন, সেখানে যাননি নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার।

সুস্মিত হালদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় নিহত জওয়ানদের স্মরণে কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। এই জাতীয়তাবাদী আবেগ যত ধরে রাখা যাবে, ততই লোকসভা ভোটে দলের লাভ হবে বলে মনে করছেন নেতারা। অথচ নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় কোন্দলের জেরে একজোট হয়ে সেই কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না তারা। প্রশ্ন উঠছে জেলা নেতাদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়েই। বিরোধীরা তো বিদ্রুপ করছেনই, ক্ষুব্ধ দলের নিচুতলার কর্মীরাও।

গত কয়েক দিনে বিজেপির ডাকে জেলার দক্ষিণাংশে কয়েক জায়গায় মিছিল হয়েছে। কিন্তু যেখানেই জেলা সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু ভৌমিক হাজির বা অমন্ত্রিত হয়েছেন, সেখানে যাননি নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার। বহিরগাছি থেকে দত্তফুলিয়া, সর্বত্রই একই ছবি।

বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করেন, আগামী ভোটে কৃষ্ণনগরের চেয়েও সম্ভাবনাময় লোকসভা কেন্দ্র রানাঘাট। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা এখানে সংখ্যায় বিপুল যাঁদের একাংশের বিজেপির প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। কিন্তু বিজেপির নিজস্ব গোষ্ঠী কোন্দল সেই সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। জওয়ানদের স্মরণ নিয়েও এই গোষ্ঠী রাজনীতি তাঁদের অনেকে ভাল ভাবে
দেখছেন না।

বিজেপি সূত্রেরই খবর, জগন্নাথ সরকার আর দিব্যেন্দু ভৌমিকের মধ্যে কোন্দল দীর্ঘদিনের। রানাঘাট-২ ব্লক কমিটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, বহিরগাছির বাসিন্দা অজিত বিশ্বাস দিব্যেন্দু-অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁর অভিযোগ, “জগন্নাথ সরকারকে চিঠি দিয়ে আমাদের কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু উনি আসেননি।” কেন? তাঁর দাবি, “অনেক দিন ধরে দেখছি, যেখানেই দিব্যেন্দু ভৌমিক থাকছেন, জগন্নাথবাবু সেই কর্মসূচি এড়িয়ে যাচ্ছেন। এ-ও হয়তো তা-ই।’’

প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও জগন্নাথ-অনুগামীদের পাল্টা দাবি, সভাপতির পক্ষে সমস্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। তৃণমূলের সঙ্গে চক্রান্ত করে সেটাকেই বিকৃত ভাবে সামনে নিয়ে আসছেন দিব্যেন্দু এবং তাঁর অনুগামীরা। এই ভাবে জগন্নাথের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন তাঁরা। দিব্যেন্দু এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমার লড়াইয়ের কথা কর্মীরা জানেন। জবাব দেবেন তাঁরাই। এটুকুই বলব যে কারও সঙ্গে মিছিলে হাঁটতে আমার কোনও সমস্যা নেই। দলের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ আমার পক্ষে করা
সম্ভব নয়।”

জগন্নাথের দাবি, “দিব্যেন্দুবাবু যে ওই সব কর্মসূচিতে ছিলেন সেটাই আমার জানা ছিল না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই। যাঁরা কারণ খুঁজছেন, তাঁরা তৃণমূলের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। দিব্যেন্দুবাবু আমার সহযোদ্ধা।”

তৃণমূল অবশ্য বিজেপির ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে কটাক্ষ করার এই সুযোগ ছাড়তে নারাজ। তাদের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের টিপ্পনী, “জওয়ানদের আত্মবলিদানের দিন যে দলের সর্বোচ্চ নেতা শুটিং করতে ব্যস্ত থাকেন, সেই দলের কাছ থেকে এর বেশি কী-ই আশা করা যায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pulwama Terror Attack BJP Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE