Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের ভূমিকায় অবাক সুতি

একই সঙ্গে দুই বোনের দেহ মিলল। তাঁরা কী ভাবে মারা গেলেন? এটা খুন নাকি আত্মহত্যা?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

সুতিতে দুই বোনের মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে তিন-তিনটে দিন। রহস্য তো কাটেইনি বরং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, পুলিশ কি কাউকে বাঁচাতে চাইছে? একই সঙ্গে দুই বোনের দেহ মিলল। তাঁরা কী ভাবে মারা গেলেন? এটা খুন নাকি আত্মহত্যা? যাই হোক না কেন, তার কারণ কী? ঘটনার বাহাত্তর ঘণ্টা পরেও পুলিশের কাছে এমন সাধারণ প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই কেন?

রবিবার দুই কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পরে তাঁদের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মোবাইল ও দু’টি ওড়না। পুলিশ জানায়, মোবাইলটি ফিঙ্গার প্রিন্টে লক করা আছে। মোবাইলটা খোলা গেলেই বেশ কিছু বিষয় জানা যাবে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ সেই মোবাইল খুলতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মোবাইল মেরামতির দোকানেও যেটা সহজে হয়ে যায়। সেই কাজটা পুলিশ এখনও করতে পারল না কেন?

কিশোরীর পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, যে ওড়না দুই কিশোরীর গলায় ছিল তা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন পুড়িয়ে দেওয়া হল? তারও কোনও সদুত্তর নেই। পুলিশ তা হলে অন্য দু’টি ওড়না বাজেয়াপ্ত করল কেন? চুপ পুলিশও।

সুতির গোঠা গ্রামে রবিবার সকালে মামার বাড়ি ঘর থেকে উদ্ধার হয় দুই বোনের মৃতদেহ। তাঁদের একজন কলেজ পড়ুয়া। অন্য জন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মামার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতেন ছোট মেয়েটি। দিন পনেরো আগে বোনের কাছে আসেন দিদিও।

দুই মেয়ের মৃত্যুর পরে তাঁদের বাবা বলছেন, “দুই মেয়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আমাদেরও এখনও পর্যন্ত কিছুই জানায়নি পুলিশ। আমার কাছে এ নিয়ে কোনও অভিযোগও চায়নি তারা। এই মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন তা এখনও আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। তবে এ নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে গ্রামে।” তা হলে আপনারাই বা অভিযোগ করছেন না কেন? ওই কিশোরীর বাবার উত্তর, ‘‘অভিযোগ করে আর কী হবে? মেয়ে দু’টোকে আর ফিরে পাব না।’’

জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার ময়নাতদন্তের পরে বলেন, ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তবে তদন্তে যা উঠে আসবে সেই মতোই পদক্ষেপ করা হবে। প্রয়োজনে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করবে।”

অথচ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুলিশ সেই মামলা রুজু করেনি। কেন?

কালীপুজোর একটি অনুষ্ঠানে এ দিন ব্যস্ত ছিলেন এসডিপিও। জঙ্গিপুরের সিআই উদয় মণ্ডল বলেন, “আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্যই অপেক্ষা করছি।” জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও বলেছেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট হবে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘ময়নাতদন্তের লিখিত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে না। ফলে তার আগে সুয়োমোটো মামলা রুজু করলে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।’’

সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে? সে ব্যাপারেও কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।

রবিবার রাতেই সুতি থানার পুলিশ শ্মশানে গিয়ে ওই দুই কিশোরীর মামাকে থানায় নিয়ে আসতে চায় কথা বলার জন্য। কিন্তু পরিবারের লোকজনের অনুরোধে পুলিশ ফিরে যায়। কিন্তু সোমবারের মধ্যে তাঁকে থানায় দেখা করতে বলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে তিনি দেখা করে এসেছেন। যদিও পুলিশ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।

পুলিশের ভূমিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে দুই কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। গোঠা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস তেওয়ারি বলছেন, “ওই দুই কিশোরীর এক জন আমার স্কুলেই পড়ত। এই মৃত্যু নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। বিভ্রান্তি কাটাতে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Police Suti Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE