Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আজ কল্যাণীতে পার্থ

পুরপ্রধান নিয়ে কোন্দল তৃণমূলে

কল্যাণীতে বিরোধী শূন্য পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান কে হবেন, সে কোন্দলে এখনও দাঁড়ি পড়েনি। তৃণমূলের অন্দরের সেই বিতর্কের মাঝে জেলা নেতৃত্বের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে হরিণঘাটা পুরসভা। বিরোধী শূন্য এই পুরসভাতেও পুরপ্রধান নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে একাধিক গোষ্ঠীর দড়়ি টানাটানি! ওই পদে কানাঘুষো চলছে অন্তত চার-পাঁচটি নাম নিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০১:৪৩
Share: Save:

কল্যাণীতে বিরোধী শূন্য পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান কে হবেন, সে কোন্দলে এখনও দাঁড়ি পড়েনি। তৃণমূলের অন্দরের সেই বিতর্কের মাঝে জেলা নেতৃত্বের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে হরিণঘাটা পুরসভা। বিরোধী শূন্য এই পুরসভাতেও পুরপ্রধান নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে একাধিক গোষ্ঠীর দড়়ি টানাটানি! ওই পদে কানাঘুষো চলছে অন্তত চার-পাঁচটি নাম নিয়ে।

হরিণঘাটার বিধায়ক নীলিমা নাগ। তাঁর সঙ্গে বর্তমান ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের সুসম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। এলাকায় দু’জনেরই প্রভাব রয়েছে। উপনির্বাচনের আগে মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ দিলীপ রায়কে সরিয়ে আর এক মুকুল-ঘনিষ্ঠ চঞ্চলকে ওই পদে আনা হয়। এ বারের পুরভোটের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয় বলেও তৃণমূল সূত্রে খবর। বিরোধী শূন্য পুরবোর্ড ‘উপহার’ দিয়ে তিনি ‘দক্ষতা’র প্রমাণ রেখেছেন। এখন নীলিমা-চঞ্চল জুটি তাঁদের পছন্দের কাউকে পুরপ্রধান করতে তৎপর হয়েছেন বলে খবর। দলের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজীব দালাল তাঁদের পছন্দের প্রার্থী।

ওই জুটিকে রুখতে মাঠে নেমেছেন ব্লক সভাপতির পদ থেকে অপসারিত দিলীপ রায় নিজেই। পুরসভার ৩ নম্বর জিতে তিনি পুরপ্রধান হওয়ার জন্য দলের বিভিন্ন মহলে সুপারিশ করতে শুরু করেছেন বলে খবর। দলের এক অংশের দাবি, মুকুল রায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক হিসাবে এক সময় এলাকায় তাঁর যথেষ্ট দাপট ছিল। এই মুহূর্তে তিনি দলে কোনঠাসা হলেও এখনও ফুরিয়ে যাননি বলে অনুমাগীদের মত। বরং বলছেন, দাদা শেষ পর্যন্ত লড়াই দিয়ে যাবেন। ফলে পুরপ্রধানের দৌঁড়ে রয়েছেন তিনিও।

নীলিমা-চঞ্চল জুটির প্রার্থী, দিলীপ রায় ছাড়াও দৌড়ে রয়েছেন চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষের প্রার্থী। রত্নাদেবী চাকদহের বিধায়ক হলেও তাঁর বাড়ি হরিণঘাটা পুরসভা এলাকায়। এলাকার সংগঠনে প্রভাব রয়েছে। রত্মাদেবীও এক সময় মুকুলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। উপন‌ির্বাচনের আগে তাঁকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়। তারপরেও তাঁর দাপট কমেনি বলেই ওই সূত্রটির মত। হরিণঘাটার ১৭ জন কাউন্সিলরের অন্তত ৮ জন তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বলে রত্নাদেবীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীণ তৃণমূল কর্মী মানিক ভট্টকে বিধায়ক পুরপ্রধান করতে তৎপর হয়েছেন বলে খবর। মানিকবাবুর সঙ্গেই বিকল্প হিসাবে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমন্ত মণ্ডলও পুরপ্রধানের দৌড়ে রেখে দিয়েছেন বিধায়ক। দলীয় সূত্রে খবর, এই দু’জনের মধ্যে অন্তত একজনকে পুরপ্রধান করতে মরিয়া তিনি।

তবে এঁদের কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। সকলেই দলের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে! সামনেই বিধানসভা ভোট। পুরভোট ঘিরে বিরোধীরা নদিয়ার একাধিক এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে। তাদের মত, সন্ত্রাস করতে না পারলে কোনও মতেই পুরসভাগুলির নিরঙ্কুশ আধিপত্য পেত শাসক দল। তৃণমূল নেতৃত্বও বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে! এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছেন। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘যাঁদের নাম ভেসে উঠছে উঠুক। এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে!’’ সেই কৌশল থেকে জেলা নেতারা বিবাদমান কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গেই প্রকাশ্য আলোচনায় যাননি।

আজ, মঙ্গলবার কল্যাণীতে আসার কথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষকও। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিনই জেলার ৮টি পুরসভার বোর্ড গঠনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত হতে পারে। জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য হরিণঘাটায় একাধিক নাম উঠে আসার বিষয়টি মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় কোথাও কোনও সমস্যা নেই। তবে রাজনৈতিক কর্মীদের উচ্চপদে যাওয়ার একটা সহজাত বাসনা থাকে। সেটা সঙ্গত। হরিণঘাটায় সকলের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সহমতের ভিত্তিতে বোর্ড গড়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE