নিজস্ব চিত্র।
স্কুলের দালানে সার দিয়ে বসে শ’খানেক খুদে পড়ুয়া। ছটফট করছে তারা। সামনে পড়ে রয়েছে ফাঁকা শালপাতার থালা। কতক্ষণে সেই থালা ভরে উঠবে মিডডে মিলের ভাত-ডালে।
একপাশে তখনও কড়াইয়ে ডাল হচ্ছে। মিডডে মিলের রাঁধুনিও খুদেদের প্রশ্নে জেরবার—‘‘আর কতক্ষণ গো মাসি!’’ স্কুলের নলকূপ খারাপ থাকায় জল পাওয়া যাচ্ছিল না। মাঝ পথে রান্না থমকে যাওয়াতেই বিড়ম্বনা। দূরের কল থেকে জল এমে তবেই না ডাল বসেছে উনুনে।
কান্দির অন্তত ৩০টি স্কুলে এমনই জলের হাহাকার। স্কুল বলছে, নলকূপ খারাপ, পানীয় জল কোথায়! তাই রান্নাতেও বিলম্ব। শুধু কি রান্না, মিডডে’র পরে বাচ্চাদের এক আঁজলা জলও বড় দুষ্প্রাপ্য।
স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার দরবার করে সুরাহার কোনও পথ দেখছে না স্কুল। কাজেই দূরের কল থেকে জল এনেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মিটছে পিপাসা।
কান্দির বহড়া প্রাইমারি স্কুলে দু’টি নলকূপ রয়েছে। একটি দীর্ঘ দিন ধরে বিকল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজল ঘোষ বলেন, “স্কুলের একটি নলকূপ অনেক দিন ধরে খারাপ। সারানোর জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। কাজ হচ্ছে কই। অন্যটি রয়েছে বটে, তবে তার অবস্থাও তথৈবচ, যে কোনও দিন খারাপ হয়ে পড়বে।’’
কয়েম্বা প্রাথমিক স্কুলের সমস্যা আবার অন্য রকম। এই স্কুলে সাকুল্যে একটিই নলকূপ। কিন্তু সেটি থেকে ঘোলা জল বেরোয়। ওই জল খেলে পেটের রোগ অবধারিত। এমনিই জলবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত হয় বর্ষায়। স্কুলের বাচ্চারা এখন বাড়ি থেকে জল বোতলে করে আনে।
তবে, নিরুপায় স্কুল কর্তৃপক্ষ মিডডে মিলের রান্নার জন্য ওই জলেই ডাল রাঁধছেন। ‘‘রান্না না হলে তো অন্য বিপত্তি’’, জানাচ্ছেন স্কুলের এক শিক্ষক।
রাতুনি প্রাথমিক স্কুলের নলকূপটির জলও পানের অযোগ্য। প্রায় দু’বছর আগে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা স্কুল পরিদর্শনের সময়ে তা নিয়ে দরবার করেছিল। তবে এখন পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনও সাড়া মেলেনি বলে জানাচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বলকান্তি দে বলছেন, “আমাদের স্কুলের নলকূপে শুধুমাত্র রান্নার বাসনপত্র ধোওয়া ছাড়া কোন কাজ করতে পারা যায় না। তাই পাশের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নলকূপ থেকে জল নিয়ে এসে রান্না করতে হয়। বহুবার বিডিওকে ওই নলকূপটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি তা দেখেই বুঝতে পারছেন।”
কান্দির বিডিও সুরজিৎ রায় বলেন, “অভিযোগ পেয়ে এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে নলকূপগুলি সংস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলে সাবমার্সিবল পাম্পের ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে পঞ্চায়েতকে।’’ তবে, আকারে-ইঙ্গিতে তিনি যা জানাচ্ছেন, তাতে নতুন বোর্ড গঠন না হলে সে কাজে হাত পড়বে, এমন ভরসা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy