Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বাজারে

মাছ বিক্রেতাও মোটা টাকায় মাছ বেচে বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশ।

দূরত্ব বজায় রেখে চাল-আলু কেনা। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

দূরত্ব বজায় রেখে চাল-আলু কেনা। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০৩:২১
Share: Save:

ইঞ্চিখানেক লম্বা কুচো চিংড়ি। সাড়ে সাতশো টাকা কিলোগ্রাম দরে মঙ্গলবার সকালে দিব্যি বিক্রি হচ্ছিল নবদ্বীপ আগমেশ্বরী বাজারে। লকডাউনের বাজারে কুচো চিংড়ির দাম শুনে বেশির ভাগ মানুষ চমকে উঠলেও কেউ কেউ অবশ্য দামের তোয়াক্কা করলেন না। সামান্য দরাদরি করে অন্যদের চোখের সামনে সাতশো টাকায় কুচো চিংড়ি কিনে বিজয় গর্বে বাড়ি ফিরছিলেন।

মাছ বিক্রেতাও মোটা টাকায় মাছ বেচে বেশ খুশি ছিলেন। কিন্তু বাধ সাধল পুলিশ। ‘‘কুচো চিংড়ির এত দাম কেন’’ প্রশ্ন করতেই রীতিমতো পুলিশের চোখে চোখ রেখে বিক্রেতা বৃন্দাবন হালদারের জবাব— ‘‘সাতশো টাকায় কিনেছি, এটুকু লাভ না রাখলে চলে?’’

যদিও ওই দামে মাছ কেনার কোনও প্রমাণ দিতে না পারায় শেষমেষ ওই মাছ বিক্রিই এ দিন বন্ধ করতে হল তাঁকে।

লকডাউনের হিড়িকে সোমবার বিভিন্ন বাজারে হঠাৎ করেই চড়ে গিয়েছিল মাছ থেকে আনাজের দাম। গণ-উন্মাদনায় ক্রেতারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বাজারে। মওকা বুঝে বিক্রেতারা যেমন খুশি দামে বিক্রি করছেন তাঁদের পণ্য। এ নিয়ে সোমবার দিনভর বিস্তর জলঘোলা হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে পথে নামে পুলিশ। নবদ্বীপ বড়বাজার, আগমেশ্বরী বাজার, তেঘরিবাজারের মতো বিভিন্ন বাজারে নজরদারি শুরু করে পুলিশ।

তবে মঙ্গলবারের বাজার ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। না ছিল সোমবারের মতো উপচে পড়া ভিড়, না ছিল জিনিসের দামের অস্বাভাবিকতা। ছবিটা চারিচারা বাজার থেকে চাকদহ বাজারে একই রকম ছিল। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া আলু বা অন্য আনাজের দাম এ দিন বেশ কম ছিল। বাড়তির দিকে দাম ছিল কেবলমাত্র মুরগির মাংসের। জানা গেল, জেলাসদরে রাতারাতি মুরগির মাংস ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হয়েছে এ দিন।

মাংস-বিক্রেতারা জানাচ্ছেন মুরগির জোগান পর্যাপ্ত না থাকার কারণে দাম বেড়ে গিয়েছে। লোকসানের ভয়ে অনেকেই ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মুরগির মাংস বিভিন্ন বাজারে বিক্রির দর ছিল বিভিন্ন রকমের। কালীগঞ্জে ১৫০-১৬০ টাকা, নবদ্বীপে ১৬০ টাকা, কৃষ্ণনগরে ২০০ টাকা, চাকদহে ১২৫ টাকা, তেহট্টে ১৮০ টাকা, রানাঘাটে ১২০ টাকা, শিমুরালিতে ১২০ টাকা।

দাম চড়া থাকলেও করোনা সতর্কতায় পিছিয়ে নেই মুরগির মাংসের দোকান। চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়কের ধারে মঙ্গলবার এক মুরগির মাংসের দোকানে নাইলনের দড়ি দিয়ে ঘিরে সাদা কাগজে আলতা দিয়ে লেখা চোখে পড়ল— ‘সাত জনের বেশি দাঁড়াবেন না। দূরত্ব বজায় রাখুন।’ করোনা-সংক্রমণের জন্যই তাঁদেরকে এই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা।

মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন বাজারের ছবিটা ছিল রবিবার, সোমবারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তুলনায় ক্রেতা কম। সকালের দিকে তা-ও যেটুকু ভিড় ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকসংখ্যা কমতে থাকে। এ দিন নবদ্বীপ, শান্তিপুর, শিমুরালি প্রভৃতি জায়গায় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়— ‘বেশি জিনিস কিনবেন না’ বা ‘প্রয়োজন মতো জিনিস কিনুন’-এর মতো বার্তা। বিক্রেতাদেরও বলা হয়, তাঁরা যেন জিনিসের দাম বেশি না নেন।

মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন বাজারে আনাজের দাম ছিল মোটামুটি এ রকম— আলু ২০-২৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকা, কাঁচাকলা দাম ২৫-৩০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, ঝিঙে ৩০-৪০ টাকা, লঙ্কা ৮০-১২০ টাকা, সিম ৪০-৬০ টাকা, কুমড়ো ২০-৩০ টাকা, উচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। কালীগঞ্জ বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ১৫ টাকা, লঙ্কা ছিল ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা। পেঁয়াজ ১৫-২০ টাকা, টম্যাটো ২০ থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, ভেন্ডি ৪০-৬০ টাকা। নবদ্বীপে আলু ২০-২২ টাকা, পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা, টম্যাটো ১৫-২০ টাকা, ভেন্ডি ৩০-৪০ টাকা, ঝিঙে ৫০-৬০ টাকা, লঙ্কা ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয় কিলোগ্রাম দরে। পোলট্রির ডিমের জোড়া ১০-১২ টাকা, দেশি ২০-২৪ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কিলোগ্রাম দরে।

আনাজ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, আনাজপাতির এই দাম আরও কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE