Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

এত ভিড় কেন, প্রশ্নের মুখে নজরদারি কমিটি

’’ ভিন্ রাজ্য ফেরত লোকজনকে ১৪ দিনের হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে পোস্টার করা  হয়েছে তা লাগাতে গিয়ে লোকজনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’

বিনামূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা হবে এমন ঘোষণার পরে ইসলামপুরের নাজিপুরে একটি গ্যাসের দোকানের সামনে সকাল থেকেই উপছে পড়ল ভিড়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

বিনামূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা হবে এমন ঘোষণার পরে ইসলামপুরের নাজিপুরে একটি গ্যাসের দোকানের সামনে সকাল থেকেই উপছে পড়ল ভিড়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
জঙ্গিপুর, বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৮
Share: Save:

কোথাও বাজারে ভিড়। কোথাও গ্রামের চায়ের দোকানে। কোথাও গ্যাসের দোকানের সামনেও লম্বা লাইন। কোথাও ব্যাঙ্কের সামনে। কিছু কিছু জায়গায় ভিড় নিয়ন্ত্রিত হলেও, অন্য অনেক জায়গাতেই কেন সেই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, মনিটরিং কমিটি বা নজরদারি কমিটিগুলি কী করছে, তা নিয়েও। লকডাউনের জেরে ভিন্ রাজ্য বা বিদেশ বিভুঁই থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘরে ফিরেছেন। তাঁদের উপর নজরদারি চালানোর জন্য গ্রাম সংসদ স্তরে আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, ভিআরপিদের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে এই কমিটি গড়েছে ব্লক প্রশাসন। তাঁরা ভিন্ রাজ্য ফেরত লোকজনের উপর নজরদারি চালিয়ে যেমন রিপোর্ট পাঠাবে, তেমনই জ্বর সর্দি কাশি হলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠাবে। অভিযোগ, নামেই কমিটি হয়েছে। নজরদারি নেই বললেই চলে। মুর্শিদাবাদের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘নজরদারি কমিটি গ্রামে গ্রামে নজরদারি করছে। তাঁরা আমাদের রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। সেই রিপোর্টের পর্যালোচনা করে কাজও হচ্ছে।’’

পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক দুলালি বেগম বলেন, ‘‘আমরা ভিন্ রাজ্য থেকে আসা লোকজনকে নিয়ে কাজ করছি। ফলে সুরক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরও জরুরি। অথচ সবাই গ্লাভস, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার পাননি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। ভিন্ রাজ্য ফেরত লোকজনকে ১৪ দিনের হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলে স্বাস্থ্য দফতর থেকে যে পোস্টার করা হয়েছে তা লাগাতে গিয়ে লোকজনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্তবাবুর দাবি, ‘‘গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে নজরদারি কমিটির সদস্যদের ধীরে ধীরে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমাতারা খাতুন বলেন, ‘‘উপযুক্ত সুরক্ষা ছাড়াই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমাদের মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার যথেষ্ট নেই। অথচ ভিন রাজ্য বা বিদেশ ফেরত লোকজনের সামনে প্রথম আমাদের হতে হচ্ছে। আমাদের সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’’ ইসমাতারার দাবি, "করোনাভাইরাসের মতো মারণ রোগ নিয়ন্ত্রণে আমাদের শামিল করা হয়েছে। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মহিলাদের কর্মী উৎসাহ ভাতা হিসেবে কিছু ঘোষণা করুক আমরা চাইছি। বিমার সুবিধা দিয়ে আমাদের লাভ কি?’’

খোদ জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নজরদারি কমিটি ঠিক মতো কাজ করছে না বলেই লকডাউন ভেঙে রাস্তায় এত লোক বেরিয়ে পড়ছেন। যদিও লকডাউন ভাঙার শাস্তি হিসেবে ২ বছরের জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানার হুঁশিয়ারি রয়েছে এই মুহূর্তে বিশেষ আইন বলে। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ বাইরে বেরোলেও এ পর্যন্ত জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় ধরা হয়নি কাউকেই।

সুতি ১ ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৯০৯ জন। এক আশা কর্মী বলছেন, “আমাদের সঙ্গে মাস্ক বা বিশেষ পোশাক কিছুই নেই। গ্লাভস নেই। হাত ধোওয়ার সাবানও নেই। তাই আমাদের পক্ষে কাজ করা খুব ঝুঁকির। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রতি গ্রামে পুলিশের নিয়মিত টহলদারি থাকলে কিছুটা কাজ হত। কিন্তু কোথাও
তা নেই।” সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলছেন, “কমিটি গড়া হলে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য কোনও সামগ্রী তাঁদের হাতে দেওয়া যায়নি। তাই ভয় পাচ্ছেন তাঁরাও। প্রতি গ্রামে তাই দরকার নিয়মিত পুলিশি টহল।’’ ফরাক্কা ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সজল পণ্ডিত বলছেন, “গ্রামে গ্রামে মনিটরিং কমিটি কাজ করছে না তা নয়, তবে তাঁদের কাছে মাস্ক, পোশাক কিছুই নেই।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব, ‘‘লোকজন লকডাউন ভেঙে যাতে ঘর থেকে না বেরোয় তার সব রকম চেষ্টা করছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE