Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

লকডাউন? চালু ইটভাটা

বুধবার বিকেলে চাকদহ থানা এলাকার চর সরাটির জয়সওয়াল ভাটায় গিয়ে দেখা গেল, ভাটার চুল্লির চারপাশে বহু মহিলা শ্রমিক কাজ করেই চলেছেন।

কল্যাণী ইটভাটায় চলছে কাজ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

কল্যাণী ইটভাটায় চলছে কাজ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৬:৩৫
Share: Save:

গোটা দেশ ঘরবন্দি। জরুরি পরিষেবা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া সবই বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। তবে জেলার বিভিন্ন শহরে পুলিশের কড়া নজরদারি চললেও গ্রামে সে ভাবে নজরদারি নেই। সেই সুযোগে নদী তীরবর্তী এলাকার ইটভাটাগুলিতে দিব্যি কাজ চলছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার বিকেলে চাকদহ থানা এলাকার চর সরাটির জয়সওয়াল ভাটায় গিয়ে দেখা গেল, ভাটার চুল্লির চারপাশে বহু মহিলা শ্রমিক কাজ করেই চলেছেন। বাবলু বলেন, ‘‘আসলে ওই শ্রমিকদের তো এখন বাড়ি পাঠাতে পারছি না। তাই একসঙ্গে সকলে মিলে কাজ করুন। তাতে ওঁদের মন ভাল থাকবে। আর আমারও ভাল হবে।’’

ওই ভাটার পাশেই রয়েছে গণেশ মণ্ডলের কেবিএফ ভাটা। সেখানে চিমনিতে দিব্যি ধোঁয়া উঠছে। কর্মীরা ইট তৈরিতে ব্যস্ত। দেখে মনেই হচ্ছে না লকডাউন, নোভেল করোনাভাইরাস, অতিমারীর মতো শব্দ ওঁরা শুনেছেন। এক শ্রমিক বলেন, ‘‘আমরা তো গরিব মানুষ। সকালে গণেশবাবু এসে বলেছেন কাজ না করলে কাউকে বসিয়ে মজুরি তো দূরের কথা, দু’মুঠো ভাতও দেবেন না। বাবুর কথা শুনে আমরা কাজ করছি।’’ গণেশকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ও সব বিধিনিষেধ শহরের জন্য। গ্রামে কিছু হবে না। তাই আমি ভাটা চালাচ্ছি।’’ কিন্তু গোটা দেশেই তো লকডাউন চলছে। গণেশের কথায়, ‘‘তেমন হলে বন্ধ করব। কিন্তু প্রশাসন আমাকে বন্ধ করতে বলেনি।’’

কল্যাণী শহর ঘেঁষা মাঝেরচর এলাকায় পরপর ইটভাটা রয়েছে। মাঝেরচরের এসবিএফ ভাটায় গিয়ে দেখা গেল, পুরোদমে কাজ চলছে। শতাধিক শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। সেই ভাটার মালিক বড়কা সাউ বলেন, ‘‘আসলে ভুল করে এটা হয়ে গিয়েছে।’’

পাশের মাঝেরচরের জয়সওয়াল ভাটার মালিক রাধা ব্যাপারী বলেন, ‘‘আমার শ্রমিকেরা কাজ ছাড়া থাকতেই পারেন না। তাই সকালে আমি নিষেধ করার পরেও ওঁরা এসে কাজ করছেন।’’ অবশ্য পাশ থেকে শিস মহম্মদ নামে এক শ্রমিক বলে ওঠেন, ‘‘রাধাবাবু আমাদের কাজ করতে বলেছেন। না হলে আমরাও চাই না এ ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে একে অপরের কাছাকাছি এসে কাজ করতে।’’ একই অবস্থা পাশের গ্লোব ভাটাতেও। সেখানে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মনোজ কুমার বলেন, ‘‘কাজ না করলে হবে না। তাই কাজ করাচ্ছি। মালিকও চাইছেন, কাজ করাতে।’’

পাশের কাশী ভাটাও ছিল কর্মব্যস্ত। সেখানকার দায়িত্বে থাকা দেও কুমারের দাবি, তিনি মালিককে অনুরোধ করা সত্ত্বেও কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঠাকুর ভাটাতেও দেখা গেল, পড়ন্ত বিকেলে কয়েকশো লোক ইট বানাচ্ছেন। ওই ভাটার মালিক সানি ঠাকুর বলেন, ‘‘বসিয়ে রেখে তো শ্রমিকদের খাওয়াতে পারব না। তাই করাচ্ছি।’’ কিন্তু একে অপরের সংস্পর্শে আসা তো বারণ। সানি বলেন, ‘‘এটা করতেই হবে। না হলে আমার উপায় নেই। ভাটা চলবেই।’’

কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত লোক এক সঙ্গে ভিড় করে কাজ করাটা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এটা প্রশাসনকে দেখতে হবে।’’ কল্যাণীর মহকুমাশাসক ধীমান বারুই বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই ইটভাটা চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’ রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি দেখছি। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।’’

পাশাপাশি, এ দিন কালীগঞ্জ ব্লকের বড় চাঁদঘর এলাকায় চার-পাঁচটি ইটভাটা চলছিল। দুপুরে সেখানে যান কালীগঞ্জের বিডিও নাজির হোসেন। ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানান, এখন ইটভাটা চালানো যাবে না। এরপর ওই ইটভাটাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE