Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হলেও গোষ্ঠী সংক্রমণ নয়

জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে— ভিন রাজ্য়ে ছড়িয়ে রয়েছে এ জেলার প্রায় ২.২৫ লক্ষ শ্রমিক।  

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৪:১০
Share: Save:

গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। তবে জেলা জুড়ে করোনার লম্বায় ছায়ায় এখনও গোষ্ঠী-সংক্রমণের আশঙ্কা দেখছেন না স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁদের দাবি, গত পনেরো দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেলেও তার সূত্র মূলত ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিয়াযী শ্রমিকেরা। তাঁদের সংস্পর্শে এসে পরিবারের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কিন্তু তাকে কখনওই গোষ্ঠী সংক্রমণ বলা যায় না। জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের মতে এটা নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস তো হাওয়ায় উড়ে আসে না। মানুষের মাধ্যমে করোনা ছড়ায়। তাই ভিন রাজ্য বা ভিন জেলা ফেরতদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ হওয়া স্বাভাবিক বিষয়।’’ জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সোমবার নতুন করে কারও করোনা পজ়িটিভ হয়নি। করোনা আক্রান্ত সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। এখন ২৭জন করোনা পজ়িটিভ চিকিৎসাধীন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮ জন।’’

প্রান্তিক জেলা মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লক থেকে প্রতি বছরই কয়েক হাজার শ্রমিক পাড়ি দেন ভিন রাজ্যে। নির্মাণ শ্রমিক থেকে রাজমিস্ত্রি, জরির শিল্পের কারিগর কিংবা নিছকই দিন মজুরের কাজের আশায় মূলত ডোমকল-নওদা-কান্দি-সুতি ব্লক থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক পাড়ি দেন দিল্লি, গুজরাত, মুম্বই কিংবা কেরলে। মরসুমি আপেল তোলার জন্য ফি বছর হাজার তিনেক শ্রমিক মে-জুন মাসে রওনা দেন কাশ্মীরের বিভিন্ন আপেল বাগানে। ইদ-মহরম ছাড়া তাঁরা খুব একটা জেলা-মুখো হন না। কেউ ঘরে ফেরেন টানা দু-তিন বছরের উপার্জন সম্বল করে। জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে— ভিন রাজ্য়ে ছড়িয়ে রয়েছে এ জেলার প্রায় ২.২৫ লক্ষ শ্রমিক।

তবে, লকডাউনের জেরে আটকে পড়া সেই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই রুজির উপায় থমকে যাওয়ায় গ্রামে ফিরতে উদগ্রীব ছিলেন। লকডাউনের প্রথম দু’টি পর্বে ট্রেন-বাসের উপায় করতে না পেরে প্রায় আধপেটা খেয়েই তাঁরা রয়ে গিয়েছিলেন ভিন রাজ্যের আস্তানায়। তবে তাঁরই মধ্যে অনেকেই নিজের উদ্যোগে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে গ্রামে ফিরেছেন। কেউ বা জেলায় ফিরেছেন পাঁচ-সাত দিন সাইকেল চালিয়ে। কেউ বা নিতান্তই পায়ে হেঁটে। পরিযায়ী স্পেশ্যাল ট্রেন চালু হতেই ঘরে ফেরা সেই সেই শ্রমিকদের ঝাঁক যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্টেশনে। সরকারি উদ্যোগে পড়শি রাজ্যের বিভিন্ন ট্রেন সীমানা থেকে বাসেও তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

ঘটনাচক্রে তার পরেই কোভিড আক্রান্তের ছায়া প্রলম্বিত হতে শুরু করেছিল জেলায়। ২রা মে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক। কিন্তু ১০ মে থেকে দফায় দফায় পরিয়ায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষ ট্রেন আসতে থাকার পরে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ১০ মে থেকে ৩১ মে পর্য়ন্ত বহরমপুরে ৫টি ট্রেনে প্রায় ১৬০০ পরিয়াযী শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন। ফরাক্কায় ১০টি ট্রেন হল্ট করেছে যা বয়ে এনেছে জেলার প্রায় ৫০০ শ্রমিককে। এর পরেই কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE