Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

সংক্রমণের শঙ্কা নিয়ে এক লাইনে

মহকুমার বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এত দিন রক্তের সঙ্কট নিয়ে কাজ করছিল, যারা এত দিন আপদকালীন সময়ে রক্তদাতাদের খোঁজ এনে দিয়েছে রোগীর পরিবারকে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

সাগর হালদার 
তেহট্ট শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে পরিকাঠামোগত অব্যবস্থার অভিযোগ উঠল। যেখানে রক্তদান করতে আসা মানুষদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা, সেখানেই পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড় করানো চলছে বলে অভিযোগ। আবার, ওই একই স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়রান্টিন কেন্দ্রেও কাজ করছেন। ফলে, সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। যে কারণে করোনা-সময়ে এগিয়ে আসা রক্তদাতাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে রক্তদাতাদের সঙ্গে সংযোগ সাধনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। তারা সাফ জানিয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোগত অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত মুমূর্ষু রোগীদের পাশে দাঁড়াতে কিংবা প্রয়োজনীয় রক্তদাতাদের খুঁজে নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে আসতে অপারগ সংস্থা।

মহকুমার বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এত দিন রক্তের সঙ্কট নিয়ে কাজ করছিল, যারা এত দিন আপদকালীন সময়ে রক্তদাতাদের খোঁজ এনে দিয়েছে রোগীর পরিবারকে। সোমবার সেই সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে মহকুমা হাসপাতালের সুপারের কাছে রক্তদাতাদের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়েছে। এ দিন সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হয় যে, বর্তমানে মহামারি পরিস্থিতিতে রক্তের সঙ্কট চলছে। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী, ক্যানসার রোগী, রক্তক্ষরণ ও অন্য জটিল অসুখের রোগীদের কথা ভেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি দিন-রাত এক করে রক্তদাতাদের খোঁজ করছেন। তাঁদের নানা ভাবে অনুরোধ করে, রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে নিয়ে আসছেন। সেখানে যদি রক্তদাতাদের সুস্থতার বিষয়টি অবহেলা করা হয়, তা হলে খুবই সমস্যার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি আরও জানিয়েছে, মহামারি পরিস্থিতিতে রক্তদাতা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। লকডাউনের মধ্যে নানা ভোগান্তি কাটিয়ে তাঁরা রক্ত দিতে আসছেন। অতএব, রক্তদাতাদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা বিষয়ে বিন্দুমাত্র আপোস করা উচিত নয়। কিন্তু উল্টে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে রক্তদাতাদের।

অভিযোগ, তেহট্ট হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিতে এসে রক্তদাতাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য অনেক সময়েই ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে এক লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। এর ফলে রক্তদাতাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যে কারণে রক্তদাতারা পরবর্তী সময়ে রক্তদান করার বিষয়ে আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কে যে সমস্ত কর্মীরা থাকেন, তাঁরাই আবার তেহট্ট কর্মতীর্থ আইসোলেশন সেন্টারে নানা কাজে যান। সে ক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদাতাদের রক্ত নেওয়ার সময় ঝুঁকি থেকেই যায়। এই বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ জানানো হয়।

মহাকুমার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য তন্ময় সরকার বলেন, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে রক্তদাতা বিপদ জেনেও এগিয়ে এসেছেন। তাঁদের কথা অবশ্যই প্রশাসনের ভাবা উচিত। সুস্থ ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রক্ত দেওয়ার পর যদি সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়, সে ক্ষেত্রে কোনও রক্তদাতাই এগিয়ে আসবেন না। তাই ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না করলে আপাতত রক্তদাতাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

এই প্রসঙ্গে তেহট্ট মহকুমা শাসক অনীশ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমায় অভিযোগ জানিয়েছে। রক্তদাতাদের জন্য অবশ্যই আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কী করা যায়, তা দেখা হবে।’’

অন্য দিকে, তেহট্ট হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এস এম আজাদ বলেন, ‘‘এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে এই কাজের জন্য কর্মী কোথায় পাওয়া যাবে? তবে কোনও কিছু সুরাহা করা যায় কি না, ভেবে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE