Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে ধাক্কা লকডাউনে

গ্রামীণ  হাসপাতালগুলির মধ্যে রাজ্যে সেরার শিরাপো পেয়েছিল মুর্শিদাবাদের অনুপনগর এবং জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বিমান হাজরা  
জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৩
Share: Save:

লকডাউনের ছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারও ধাক্কা খেল।

গ্রামীণ হাসপাতালগুলির মধ্যে রাজ্যে সেরার শিরাপো পেয়েছিল মুর্শিদাবাদের অনুপনগর এবং জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল। ঘরে নয়, হাসপাতালে— গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে প্রসূতিদের হাসপাতালনুখী করে ২০১৮ সালে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল জেলার প্রান্তিক এই দুই হাসপাতাল। গত দু-সপ্তাহে জেলা স্তব্ধ হয়ে পড়ায়, সেই দুই হাসপাতালেও প্রসূতিদের আনাগোনা এখন নগন্য। কপালে তাই ভাঁজ পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের, তা হলে কি ঘরেই ফের প্রসব-প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রামীণ মানুষ?

এক বছর আগে, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে শীর্ষে ছিল জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং অনুপনগর গ্রামীণ হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ১৪,৫৬৩টি শিশু প্রসব হয়েছিল। গড়ে দৈনিক ৪০টি। গ্রামীণ ক্ষেত্রে শমসেরগঞ্জের অনুপনগর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের সংখ্যা ছিল ৯০৪৭টি। প্রতি দিন শিশুর জন্মহার ছিল ২৫টি। ২০১৯ সালে অনুপনগরে প্রসবের সংখ্যা ১১০০ ছাড়িয়েছিল। জঙ্গিপুরে ১৭ হাজার।

জঙ্গিপুর হাসপাতালে ২০১৮ সালে দৈনিক প্রসব হার ছিল ৪০। ২০১৯ সালে সেই প্রসবের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাকুল্যে ৪৬। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই প্রসবের সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।

থমকে যাওয়া জেলায়, অনুপনগর গ্রামীণ হাসপাতালে, সেই প্রসবের হার ২৫ থেকে কমে ১২’তে দাঁড়িয়েছে। বহির্বিভাগে যেখানে দৈনিক গড়ে ৭০০ রোগীর ভিড় হত তা নেমে এসেছে ১০০। রোগী ভর্তি থাকতেন, ৯০ থেকে ৮০, এখন তা ১৫। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এখানে প্রসব হয় শুধু স্থানীয়দেরই। অদূরে বৈষ্ণবনগরের বেশ কয়েকটি চরের গ্রাম, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। দু’টি জায়গা থেকেই রোগী আসতে পারছে না যানবাহন ও পুলিশি কড়াকড়িতে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, শমসেরগঞ্জ এলাকায় গর্ভনিরোধক ব্যবহার খুব কম। মহিলাদের পরামর্শ দিলেও তা তাঁরা খেতে চান না পরিবারের বাধায়। সেই পিছিয়ে থাকা এলাকায় প্রচার চালিয়ে সাফল্য মিলেছিল গর্ভ নিরোধক অন্তরা ইঞ্জেকশন। এই ইঞ্জেকশন তিন মাস অন্তর নিতে হয়। গত বছর চাহিদামত ইঞ্জেকশন মেলেনি। তা সত্ত্বেও অন্তরার ব্যবহারে জন্মহার অনেকটাই কমানো গিয়েছে। শমসেরগঞ্জে ২০১৮ সালে হোম ডেলিভারি ছিল ২২০০। গত বছর সেটা কমে ৮০০’তে নেমে আসে। এ বছর তা আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। তবে লকডাউনের আবহে আশা কর্মীরা বার বার গ্রামে গিয়ে বোঝালেও অধিকাংশ প্রসূতি হাসপাতালমুখী হননি। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ক্ষেত্রে প্রসূতিকে ৬০০০ টাকা দেওয়া হয় জননী সুরক্ষা যোজনায়। আর্থিক দিক দিয়ে এই সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও অনেকেই হাসপাতালে আসতে পারেননি।

হাসপাতালের সুপার সায়ন দাস বলেন, “প্রসবের হার এ ক’দিনে কমেছে। ঝাড়খণ্ড, বীরভূম থেকে প্রসূতি আসতেই পারছেন না।’’ তবে এই অবসরে বাড়িতে প্রসবের রেওয়াজ ফের জাঁকিয়ে বসবে না তো— প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE