Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

নাতিটা অনর্গল বায়না ধরছে, খিদে পেয়েছে

সাত বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরে বিড়ি বেঁধেই দুই মেয়েকে নিয়ে টানাপড়েনের সংসার। লকডাউনের ছায়ায় সেই রুজিতেও এখন তালা পড়েছে।

হতাশ লক্ষ্মীদেবী। নিজস্ব চিত্র

হতাশ লক্ষ্মীদেবী। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৫
Share: Save:

তিন দিনে জোগাড় করা গিয়েছে সাকুল্যে কিলো চারেক চাল, দু’কেজি আলু। বুধবার পর্যন্ত সেই চালে-আলুতে ফুটিয়েই চলেছে। লক্ষ্মী মণ্ডল কপালের ঘাম মুছে বলছেন, ‘‘বিষ্যুদবার আর আঁচ দেব না উনোনে, এক দিন না হয় উপোস!’’

সাত বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরে বিড়ি বেঁধেই দুই মেয়েকে নিয়ে টানাপড়েনের সংসার। লকডাউনের ছায়ায় সেই রুজিতেও এখন তালা পড়েছে। লক্ষ্মী এখন উঠোনের কোণে হাতের তেলোতে ভবিষ্যৎ খোঁজেন, তার পর একটা লম্বা শ্বাস অনিশ্চিত হাওয়ায় ভাসিয়ে বলছেন, ‘‘কেন এমন হল বলুন তো!’’

ধুলিয়ান শহরের লালপুর গুড়িপাড়ায় খুপরি ঘরে নিশ্চুপ সংসার তাঁর। ছোট পূর্ণিমা পঞ্চমেই পড়া ছেড়ে মায়ের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিল বিড়ি বাঁধাইয়ের কাজে। স্তব্ধ শিল্প সংসারটাও যেন চুপ করিয়ে দিয়েছে। বড় মেয়ে জয়া, বিয়ের পর বছর ঘুরতেই ছেলে-বর নিয়ে মায়ের সংসারেই ঠাঁই নিয়েছে।

মেয়ে-মায়ের দিনভরের পরিশ্রমে দৈনিক হাজার দুয়েক বিড়ি বেঁধে সংসারে আয় ছিল শ’তিনেক টাকা। সপ্তাহে তিন দিন কাজ জুটলেও ডাল-ভাতের কোনও অভাব হয়নি। সেই নিতান্ত খড়কুটোর জীবনেও এখন দাঁড়ি পড়তে চলেছে। লক্ষ্মী বলছেন, ‘‘কস্মিনকালেও এমন শুনিনি। একটা রোগ এল আর সব দুয়ারে কুলুপ আঁটল, রুজি বন্ধ হল, এ কী দিন এল গো!’’ খাটের নীচে মাটির সরায় সঞ্চিত চালটুকু বের করে স্থির তাকিয়ে তাকেন লক্ষ্মী। বলছেন, ‘‘গোটা সপ্তাহ শেষে এক দিনেই মজুরি, হপ্তার টাকা। তাই দিয়ে চাল, আলু, আনাজটা কিনে রাখতাম। চলে যেত তাতেই। কার্ফু হল যে দিন তার পর দিনই বাজার করেছি। কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার পর থেকে দিনগুলো যেন মেঘ করে এল!’’ কপালের ঘাম মুছে জানান, তাতেও অসুবিধা হত না, যদি রুজির সাপ্তাহিক টাকায় টান না পড়ত।

মজুরির টাকা বাকি থাকলেও ধারে অন্তত দোকান থেকে চাল, আলুটা পেতেন, কিন্তু রোজগার থমকে যাওয়ায় সব কেমন তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে লক্ষ্মীর।

লক্ষ্মীর গলা ধরে আসে, বলেন, “আমরা বড় মানুষ না হয় খেয়ে না খেয়ে চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু বছর ছয়েকের নাতি? বার বার খেতে চাইছে যে। কানে আর নিতে পারছি না!’’ চেষ্টা করেছিলেন, পরিচারিকার কাজ করে মায়ে-মেয়ে চালিয়ে নেবেন। কিন্তু এমনই অবস্থা যে, বাইরের লোককে কাজেও নিতে চাইছে না।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE