Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

প্রবীণেরা এখনও বাজারে-দোকানে, ভয় বিপদের 

গোটা বিশ্বে যেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মৃতদের তালিকায় রয়েছেন অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি— এ কথা সর্বত্র প্রচার করা হচ্ছে। তার পরেও তিনি কেন রাস্তায় বেরোলেন?

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

সুদীপ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

লকডাউনে কৃষ্ণনগরের সুনসান রাস্তা। এক হাতে ছাতা, কেরোসিনের ঢপ আর অন্য হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে পোস্ট অফিস মোড় থেকে হেঁটে আসছিলেন এক প্রবীণ। গত দিনও তাঁকে রাস্তায় দেখা গিয়েছিল।

গোটা বিশ্বে যেখানে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মৃতদের তালিকায় রয়েছেন অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি— এ কথা সর্বত্র প্রচার করা হচ্ছে। তার পরেও তিনি কেন রাস্তায় বেরোলেন?

প্রবীণের উত্তর, ‘‘গত কাল গিয়েছিলাম ওষুধ আনতে। আজ রেশন আনতে বেরিয়েছি।’’

এই কাজগুলো করার মতো বাড়িতে কেউ নেই?

উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ছেলে, ছেলের বউ সবাই আছে। কিন্তু বাইরে বেরোতে হচ্ছে আমাকেই। মেয়ে বাইরে থেকে কুরিয়ারে ওষুধ পাঠাত। এই পরিস্থিতিতে সেটা পারছে না।’’

অগত্যা রাস্তায় বেরোচ্ছেন তিনি। প্রাণের ঝুঁকি আছে, তা জেনেবুঝেও। কথাগুলো বলার সময়ে প্রবীণের গলায় কার্যত হতাশার সুর।

শুধু তিনি নন, শহরে এমন উদাহরণ অসংখ্য। ভিক্ষাজীবী অমূল্য দাস থেকে রিকশাচালক সুবল বিশ্বাস— সকলেরই এক কথা।

কেউ বলছেন, ‘‘ছেলে দেখে না। তাই পেটের টানে বা ওষুধ আনতে বাধ্য হয়েই রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে।’’

কেউ বলছেন, ‘‘আমাদের দেখার মতো কেউ নেই, ছেলেমেয়ে বাইরে থাকে। খাবার, ওষুধের জোগাড় তো করতেই হবে।’’

অতএব, যাঁদের সুস্থ রাখার জন্য এত সাবধানতা, যাঁদের সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর কথা ভেবে এই লকডাউন, তাঁদের মধ্যে অনেক বয়স্কই রাস্তায় বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন।

এ দিন মুখে মাস্ক পরে পাত্রবাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ফিরছিলেন ৭০ বছরের সুশীল ডিকোস্টা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে আর কেউ নেই, তাই কোনও দিন ওষুধ, কোনও দিন বাজারে যেতে হচ্ছে।’’

আবার উল্টো ছবিও আছে। সব সময়ে যে বয়স্কেরা বাধ্য হয়েই বাইরে বেরোচ্ছেন, এমন নয়। বিকল্প থাকা সত্ত্বেও জোর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন, এমন প্রবীণের সংখ্যাও কম নয়। মল্লিকপাড়ার মুখে এমনই এক বৃদ্ধের দেখা মিলল। মুখে কাপড়ের মাস্ক পরে হেঁটে আসছিলেন তিনি। বাইরে বেরনোর কারণ জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘‘বন্ধুর বাড়ি গল্প করতে গেছিলাম।’’

আবার, নবদ্বীপের রাস্তায় ওয়াকার নিয়ে হেঁটে আসা এক বৃদ্ধাকে বাইরে বেরনোর কারণ জিগ্যেস করায় তাঁর উত্তর, ‘‘ওই বাড়ির ছোট ছেলেটা অঙ্ক বুঝছিল না, ওকে বোঝাতে গেছিলাম।’’

অনেক পরিবারেরই অভিযোগ, বাড়ির বয়স্ক মানুষদের ঘরে আটকানো যাচ্ছে না লকডাউনের সময়ে। তাঁরা সমস্ত বুঝেও শিশুর মতো আচরণ করছেন। পরিবারের কেউ এ নিয়ে মানা করলে অশান্তি, রাগারাগি করছেন তাঁরা। যেমন ঘূর্ণির বংশী ঘোষের বাবা। ছেলে বলেন, ‘‘বিকেল হলেই বাইরে যাওয়ার জন্য বাবা ছটফট করতে থাকে।’’ বাবাকে ঘরে রাখতে বাধ্য হয়েই তাই সদর দরজায় তালা দিয়েছেন বংশী।

অনেক ক্ষেত্রে আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে বয়স্কদের বাইরে আনতে হচ্ছে। বাহাদুরপুরের দুর্যোধন ঘোষ কোনও যানবাহন না পেয়ে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে সাইকেলে চাপিয়ে কৃষ্ণনগরে এনেছেন চোখের ডাক্তার দেখাতে। ‘‘কিন্তু এত দূর এসেও দেখি ডাক্তারখানা বন্ধ’’— বলেন হতাশ দুর্যোধন।

কারণ যাই হোক, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বয়স্কেদের যে অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন, তা বলছেন সব বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকেরাই।

কৃষ্ণনগর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আমোদ প্রসাদ যাদব বলেন, ‘‘যে কোনও বয়সের মানুষই করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু ৬৫ বছরের বেশি পুরুষদের ক্ষেত্রে রোগের জটিলতার আশঙ্কা বেশি থাকে। এর সঙ্গে ধূমপানের অভ্যাস বিপদ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।’’

ওই চিকিৎসক জানান, হৃদ্‌যন্ত্র-ঘটিত সমস্যা, ডায়াবিটিস, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যানসারের রোগী করোনা-আক্রান্ত হলে তাঁর জীবন সংশয়ের আশঙ্কা খুব বেড়ে যায়। বয়স্কদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘‘বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থেকে পারস্পরিক ১ মিটার দূরত্ব রাখার অভ্যাস ধীরে ধীরে রপ্ত করে নিন।’’ এ ছাড়া, সময় কাটাতে বই পড়া, গানবাজনা, ডায়েরি লেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE