Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ট্রেন চালুর অপেক্ষায় দিন গোনা

লোকাল ট্রেন চলা বন্ধ কতদিন। ফাঁকা পড়ে স্টেশন, রেললাইন। দিনরাত চোখ রাঙাচ্ছে সিগনালের লালবাতি। রেলের ছন্দে পেশার নানা লাইন ধরে ছুটছিলেন যাঁরা, তাঁরা আজ বেলাইন। কেউ বেকার, কেউ পেশা বদলেছেন। এই দুরাবস্থা চলবে অন্তত আরও একমাস। কী ভাবে দিন ওঁদের, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।লকডাউনের সময় থেকেই বন্ধ ট্রেন চলাচল। কাজ বন্ধ হারানের মতো ট্রেনের ফেরিওয়ালাদের। সেই কাজ কবে শুরু হবে, বা আদৌ আগের মতো ট্রেনে ফেরি করা যাবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৬:১৪
Share: Save:

ভোর হলেই ঘুমটা ভেঙে যায় হারান দাসের। নিজের অজান্তে কখনও কখনও হাতটা চলে যায় ঘরে রাখা মনোহারি সামগ্রীর স্ট্যান্ডটার দিকে। চটজলদি ঘড়ির দিকে তাকান, ভোরের ট্রেনটা ধরতে হবে। পরক্ষণেই খেয়াল হয় সেই তাড়া তো নেই। ট্রেন বন্ধ। বন্ধ জিনিস ফেরি করার কাজও।

লকডাউনের সময় থেকেই বন্ধ ট্রেন চলাচল। কাজ বন্ধ হারানের মতো ট্রেনের ফেরিওয়ালাদের। সেই কাজ কবে শুরু হবে, বা আদৌ আগের মতো ট্রেনে ফেরি করা যাবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।

সকাল থেকে রাত, ট্রেনের এক কামরা থেকে আরেক কামরায় ভিড় ঠেলে ভেসে বেড়ানো। কারও কাঁধে বা হাতে ভারী ব্যাগ, কারও স্ট্যান্ডে ঝুলছে নানা মনোহারি সামগ্রী, কেউ বা বিক্রি করছেন লজেন্স, বাদাম, চানাচুর ইত্যাদি। আবার কারও মাথায় ফলের ঝুড়িতে সাজানো নানা ফল। তা নিয়েই মানুষের ভিড়ের মধ্যে পা বাড়ান ওঁরা। লাইন ধরে ঝমাঝম শব্দ তুলে যখন ছুটে যায় ট্রেন, সেই ছন্দেই বাঁধা থাকে ওঁদের জীবন জীবিকা। এ ভাবেই পার হয়ে যান একের পর এক স্টেশন। দিনের শেষে সীমাবদ্ধ আয়। তবুও এর উপর ভরসা করেই কেটে যাচ্ছিল জীবন। তাতেই বাদ সেধেছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি।

রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালাতেই সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন এই ফেরিওলারা। বীরনগরের হারান যেমন প্রায় তিরিশ বছর ধরে নানা মনোহারি সামগ্রী ফেরি করছেন ট্রেনে ঘুরে ঘুরে। বাড়িতে আছে মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং মানসিক ভারসাম্যহীন এক কাকা। ছ’জনের সংসার চালানোর ভার তাঁর উপরেই। প্রতি দিন ভোরে বেড়িয়ে পড়তেন। বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরে স্নান খাওয়া সেরে দুপুর নাগাদ আবার ট্রেন ধরতেন। বাড়ি ফিরতে সেই রাত ৮টা-৯টা। কখনও চাকদহ বা রানাঘাটে যেতেন মাল আনতে।

হারান বলেন, “অল্প যা কিছু আয় হত সারা দিন ঘুরে, এখন তো সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। ট্রেন কবে চালু হবে, আর হলেও কত যাত্রী হবে আর বেচাকেনাই বা কেমন হবে, তাই বা কে জানে। কটা দিন রেশনের চাল, গম দিয়ে কাটিয়ে দিলাম। এই বয়সে এসে আবার নতুন পেশা কী ভাবে খুঁজি।”

শান্তিপুরের সঞ্জিত দাস যেমন বছর পঁচিশেক ধরে ট্রেনের কামরায় নানা মরসুমি ফল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, “স্ত্রী অল্পস্বল্প সুতোর কাজ করেন। তা দিয়ে আর রেশন থেকে পাওয়া জিনিস দিয়ে কোনও মতে চালাচ্ছি। তবে ট্রেন চালু হলেও এখন যাত্রীরা কি আর কেউ বাইরে থেকে ফল কিনে খাবেন?’’ তাহেরপুরের দিলীপ দত্ত বছর দশেক ধরে ট্রেনে শোনপাপড়ি বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, “অপেক্ষায় রয়েছি, কবে ট্রেন চালু হবে। কারণ, এ ভাবে তো সংসার চালানোই যাচ্ছে না। নুনভাত খেয়ে বেঁচে আছি।” অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটছে ট্রেনের ফেরিওয়ালাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE