অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক বৃদ্ধ দম্পতির। মঙ্গলবার সকালে নবদ্বীপের হরিসভা পাড়ার ভাড়াবাড়ি থেকে নিত্যগোপাল সাহা (৭৫) এবং তাঁর স্ত্রী শিপ্রাদেবীর (৬৮) দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির দেহের পাশে শিপ্রাদেবীর একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, একসময়ের নামকরা ব্যবসায়ী নিত্যবাবু আর্থিক টানাপড়েনে ছিলেন। শিপ্রাদেবীও দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছিলেন। তা থেকে নিষ্কৃতি পেতে শিপ্রাদেবী নিত্যবাবুকে বলেন যে, তাঁকে মেরে ফেলে নিত্যবাবু যেন আত্মহত্যা করেন। আর শেষ পর্যন্ত নিত্যবাবু যদি আত্ম্যহত্যা করতে নাও পারেন তার ব্যবস্থাও করেছিলেন ওই বৃদ্ধা। সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী থাকবেন না। সেই নোটে ওই দম্পতির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিজনদের বেশ কয়েকটি ফোন নম্বরও লেখা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় নবদ্বীপের নামকরা বস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন নিত্যগোপালবাবু। কিন্তু ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। ছেলের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় অনেকদিন ধরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সস্ত্রীক তিনি আলাদা থাকতেন। সম্প্রতি শিপ্রাদেবী নানা রোগে ভুগছিলেন। সামান্য সঞ্চয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা এবং সংসার চালাতে গিয়ে রীতিমতো বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন নিত্যগোপালবাবু। যদিও চার মেয়ে-জামাই ও ছেলে ওই দম্পতিকে সব দিক থেকেই সাহায্য করতেন।
সোমবার রাতে শেষ বারের মতো ছেলে নবেন্দুবাবুর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছেলে নবেন্দু সাহা বলেন, ‘‘ইদানীং মা বেশ ভেঙে পড়েছিলেন। দিদি-জামাইবাবু মাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু মা রাজী হচ্ছিলেন না।’’ নিত্যবাবু সোমবার রাত ৮টা নাগাদ নবেন্দুবাবুকে ফোন করে জানান যে, শিপ্রাদেবী কলকাতার হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। সেই কারণে ছেলেকে তিনি হরিসভার বাড়িতেও আসতে বলেন। নবেন্দুবাবু মঙ্গলবার সকালে যাবেন বলেছিলেন। ‘‘আমার যাওয়ার আগে তো ওঁরাই চলে গেলেন।’’— আক্ষেপ নবেন্দুবাবুর।
এ দিন সকালে বাড়ির পরিচারিকা কাজ করতে এসে ঘরের দরজা খুলে দেখেন, গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় খাটের উপর শোয়ানো আছে শিপ্রাদেবীর দেহ। নিত্যবাবুর দেহ সিলিং ফ্যান থেকে ধুতির ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে। ওই পরিচারিকার চিৎকারেই ছুটে আসেন পড়শিরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই দম্পতির দেহ উদ্ধার করে।
নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মানসিক অবসাদের কারণেই এমন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy