যাত্রা শুরু। নিজস্ব চিত্র
করোনা’কে হেলায় হারিয়েছেন তাঁরা। রোগটা যে আদপেই ‘অপরাজেয়’ নয় তা বোঝাতেই এ বার করোনা-আক্রান্তদের মধ্যে সাহস ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়লেন তাঁরা নিজেরাই।
দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, করোনা-জয়ীদের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোভিড আক্রান্তদের মনোবল বাড়াতে ব্যবহার করা হবে। তারই প্রথম ধাপ হিসেবে মুর্শিদাবাদের ৩০ জন করোনা-জয়ীকে কলকাতার বিভিন্ন করোনা হাসপাতালে পাঠানো হল সোমবার। এ দিন সকালে বহরমপুরে পুলিশ সুপারের অফিস থেকে একটি বাস তাঁদের নিয়ে রওনা দিল কলকাতা। সেখানে তাঁদের হাতে করোনার-কিট এবং উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্তারা। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘কলকাতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের অতিথিশালায় দু’দিন তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পর, কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজে লাগানো হবে তাঁদের।’’
মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলে মনোবল জোগানোর পাশাপাশি রোগীর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেওয়া, নিয়মিত জ্বর মাপা, তাঁদের সঙ্গে অবসরে গল্প করা— এক গুচ্ছ দায়িত্ব তাঁদের। তিনি বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাসে এক বার আক্রান্ত হওয়ার পরে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তা ছাড়া পূর্ণ সুরক্ষা দিয়েই তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মাসিক ১৫ হাজার টাকা সাম্মানিক ভাতাও দেওয়া হবে তাঁদের।
নবগ্রামের নতুন গ্রামের মইনুদ্দিন শেখ মুম্বইতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। তিনি বাড়ি ফিরে গত মে মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। মইনুদ্দিন বলেন, ‘‘এখানে কাজ নেই। ফিরে যাব ভাবছিলাম। তখনই করোনা হাসপাতালে রোগীদের সেবা করার সুযোগ পেলাম। আমি খুশি।’’ কান্দির চৈতন্যপুরের বুরহান শেখ বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে ভয় লেগেছিল। কিন্তু কয়েক দিনেই বুঝলাম এ রোগের সঙ্গে লড়াই করা যায়। সে কথাই বলব আক্রান্তদের।’’
করোনা সংক্রমণ যত না ভয়ের তার চেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে গাঁ-গঞ্জে। কোথাও বা আক্রান্তদের এমন চোখে দেখা হচ্ছে, যেন তাঁরা অপরাধী। এমনকি করোনা সারিয়ে ঘরে ফেরার পরেও তাঁদের কাছে ঘেঁষতে চাইছেন না বাড়ির পরিজনেরাও, এমন নজিরও রয়েছে। দিন কয়েক আগে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ফরাক্কা এলাকার এক প্রৌঢ়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘আমার পরিবারের লোকজনই আমাকে খাবার ছুড়ে দিত। থাকতে হত বারান্দার কোণে। অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে ডাক্তারখানায় গেলেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ এই সংস্কারের আবহে করোনা নিয়ে অযথা আতঙ্ক দূর করতে এবং করোনা জয়ীদের সামাজিক সম্মান জানাতে মুর্শিদাবাদের চিকিৎসক থেকে পুলিশ কর্তা, প্রশাসনের কর্তাদের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ সারভাইভারস ক্লাব’ তৈরি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী বহরমপুরের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে জেলায় জেলায় এমন ‘কোভিড ওয়ারিয়ার’ ক্লাব গঠনের নির্দেশ দেন। সে দিনই তিনি জানিয়েছিলেন করোনা জয়ীদের কাজে লাগানো হবে। মুর্শিদাবাদ কোভিড ওয়ারিয়ার ক্লাবের সম্পাদক তথা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক অমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘আমাদের উদ্যোগ রাজ্য সরকার গ্রহণ করায় আমরা সম্মানিত। করোনা থেকে সু্স্থ হয়ে যে ঘরে ফেরা যায় তার পাঠ দেওয়াই করোনা-জয়ীদের কাজ।’’ মুর্শিদাবাদের করোনা হাসপাতালেও (মাতৃসদন) তাঁদের কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। তিনি বলেন, ‘‘সরকার আপাতত কলকাতার জন্য ৩০জন করোনা জয়ীকে নিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ এলে এখানেও তাঁদের কাজে লাগানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy