ভুলব-না: শহিদ স্মরণে পথে নামল দুই পক্ষই। তৃণমূল আর সিপিএম। নবদ্বীপে। নিজস্ব চিত্র
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিনটি খুন সে দিন নাড়িয়ে দিয়েছিল নবদ্বীপ শহরকে। একটি খুনের বদলায় জোড়া খুন। ১৯৭৯ সালের ৫ এবং ৬ সেপ্টেম্বর নিহত হলেন তিন তরুণ। প্রথম জন সিপিএম সমর্থক। পরের দু’জন কংগ্রেসের কর্মী।
প্রায় চার দশক আগের দিন দু’টি আজও ভুলতে পারে না এই শহর। বুধ ও বৃহস্পতিবার পরপর দু’দিন দু’টি মৌনী মিছিল মনে করিয়ে দিল সেই কালো দিনের কথা।
ইতিহাস বলছে, সেই ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢপওয়ালির মোড়ে খুন হন সিপিএমের কর্মী, নাম করা দর্জি দুলাল দাস। পুজোর আগে নতুন সেলাই মেশিন কিনতে ঢপওয়ালির মোড়ের এক দোকানে এসেছিলেন তিনি। ভরসন্ধ্যায় তাঁকে খুন করা হয়।
সবে দু’বছর হল, বামফ্রন্ট তখন রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতাচ্যুত কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হচ্ছে মাঝে-মাঝেই। নবদ্বীপ রাজনৈতিক ভাবে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গিয়েছে। উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ রাধাবাজার থেকে পোড়ামাতলা, বড়ালঘাট, পোড়াঘাট, শ্রীবাসঅঙ্গন চরা, রানির চরা, প্রতাপনগর, হরিসভাপাড়া, ফাঁসিতলা ইত্যাদি এলাকায় কংগ্রেসের প্রতাপ। দক্ষিণে চারিচারা পাড়া, নন্দীপাড়া, দণ্ডপাণিতলা, মণিপুর, দেয়ারাপাড়া, বুঁইচারা পাড়া, স্টেশন রোড সংলগ্ন অঞ্চল সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি।
শহিদ স্মরণে পথে সিপিএম
দু’টি অঞ্চল তথা দলের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল পালাবদলের পর থেকেই। কিন্তু বড় মাপের খুন দুলালই। অভিযোগের আঙুল ওঠে কংগ্রেসের দিকে। শহর জুড়ে চাপা উত্তেজনা। ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সিপিএম ধিক্কার মিছিল বের করে। খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে নবদ্বীপ থানায় পৌঁছয় সেই মিছিল।
তখন সকাল বড় জোর ৮টা। নবদ্বীপ থানা থেকে মিছিল এগোয় নবদ্বীপে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বড়ালঘাটের দিকে। সামনে পুলিশ ভ্যান, তার পিছনে বিপুল জনতা। বড়ালঘাট রানির চরা অঞ্চলে শুরু হয়ে যায় গোলমাল। সেই সময়ে কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান দুই মুখ পুণ্ডরীকাক্ষ ওরফে নন্দ সাহা এবং মদন কুণ্ডুর খোঁজে শুরু হয় বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি।
কিছু ক্ষণ প্রতিরোধ করলেও বিশাল বাহিনীর সামনে সে সব খড়কুটোর মতো উড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন দুই কংগ্রেস কর্মী রঞ্জন সাহা এবং স্বপন দাস। মারাত্মক আহত হন নবদ্বীপের বর্তমান বিধায়ক নন্দ সাহা।
কয়েক মাস পরে বড়ালঘাটে জোড়া শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী স্বয়ং। প্রায় পাঁচ বছরের চেষ্টায় নবদ্বীপে শান্তি ফেরে, কিন্তু শহরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যায় ৫ এবং ৬ সেপ্টেম্বর। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমূল বদলে গিয়েছে। সিপিএম এখনও দুলাল দাসের স্মরণে ৫ তারিখ মিছিল করে। তবে কংগ্রেস নয়, ৬ সেপ্টেম্বর পালন করে তৃণমূল। পুণ্ডরীকাক্ষের সঙ্গে শহিদ-স্মরণের সেই প্রথাও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে চলে এসেছে যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy