বহরমপুরের এক রেঁস্তরায় রকমারি বাঙালি পদ। —নিজস্ব চিত্র
নববর্ষের প্রথম দিনে রসিকের পাতে রকমারি বাঙালি খাবারের স্বাদের সন্ধান দিতে বহরমপুর শহরের একাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁর মধ্যে চলল প্রতিযোগিতা। কোনও হোটেল ইলিশের হরেক পদ তো কোনও রেস্তোরাঁ ভোজন রসিকের পাতে তুলে দিল ছোট মাছের চচ্চড়ি থেকে তেল কই। কেউবা ভরসা রাখল ঐতিহ্যময় ‘ট্র্যাডিশন্যাল বেঙ্গলি ইসলামিক’ পদে। রইল ঢেঁকিতে কোটা বিভিন্ন মশলায় তৈরি ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল মটন’ও।
ইংরেজি নববর্ষকে বাজি-পটকা, হুল্লোরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর ‘পয়লা বৈশাখ’ আসে ‘হাতা-খুন্তির’ আওয়াজে। খাদ্যপ্রিয় বাঙালি বর্ষবরণের দিন ভুড়িভোজেই উদযাপন করে। পরনে নতুন পোশাক। মঙ্গলবার ছিল চৈত্র সেলের শেষ দিন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দোকান ও ফুটপাথ ঘুরে ক্লান্ত বহু গৃহকর্ত্রীই। বর্ষবরণের দিনে তাঁরা হেঁসেলে ঢুকতে চাননি। তাঁদের সহায় হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ।
বুধবার, ছুটির দুপুর থেকেই হোটেল-রেস্তোরাঁতে ছিল চোখে পড়ার মত ভিড়। তবে বসে খাওয়ার জন্য যতটা না ভিড়, তার চেয়ে ‘পার্সেল’ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিল লম্বা লাইন। অনেকে আবার সকালেই ফোনে ফরমায়েস মতো প্যাকেট বন্দি খাবার বাড়িতে নিয়ে যান। কোনও রেস্তোরাঁ সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ষবরণের দিনে ‘ট্র্যাডিশন্যাল বেঙ্গলি ইসলামিক’ রান্না খাইয়েছে। সেই রান্নায় ছিল ঢেঁকিতে কোটা বিভিন্ন মশলা দিয়ে বানানো ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল মটন’। সাধারণ খাসির মাংসের রান্নায় যে রঙ হয়, তার তুলনায় কালো রঙের দেখতে হয়। কিন্তু স্বাদের দিক থেকে অতুলনীয় বলে দাবি ‘গসিপ মোর’-এর রেস্তোরাঁর মালিক শৈবাল রায়ের। বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্র রানিবাগানে বছর দু’য়েক আগে বাংলা বর্ষবরণের দিন ধূমধামের সঙ্গে উদ্বোধন হয়েছিল সোনালী বাংলার। দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বর্ষবরণের দুপুরে ও রাতে অতিথিদের খাবারের সঙ্গে বিশেষ উপহার তুলে দেয় তারা।
রান্নায় বাঙালি ঘরানার স্বাদ আনতে বাজার চলতি রান্নার মশলা ব্যবহার না করে ঢেঁকিতে কোটা মশলা ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছিলেন রেস্তোরাঁ মালিক শৈবাল রায়-সুপ্রিয় দাস জুটি। এর আগে ইংরেজি বর্ষশেষের দিনে তাঁরা অক্টোপাস-স্কুইড্ রান্না উপহার দিয়েছিলেন বহরমপুরবাসীকে। বাংলা বর্ষবরণে এ বারও সাহসী পদক্ষেপ করেছেন তাঁরা। বন্ধু শামিম মেহবুব শামিমের তত্ত্বাবধানে ‘ট্র্যাডিশন্যাল বেঙ্গলি ইসলামিক’ নানা পদ খাইয়েছেন। বাঙালি ঘরানায় তৈরি শুক্তো, মুড়িঘণ্টোর সঙ্গে অতিথিদের স্বাদ বদলে ছিল বড়ি বাহার, বেগুন ও ডিম দিয়ে রান্না খোবনি এবং ব্ল্যাক বেঙ্গল মটন। কুমড়ো মেশানো বড়িকে খোলায় ভেজে, বড়ি সেদ্ধ করে তার সঙ্গে বিভিন্ন মশলা দিয়ে মাখা রান্না হল ‘বড়ি বাহার’। থাকছে মোচার ঘণ্টো, ছোট মাছের চচ্চড়ি, চিতল মুইঠ্যা, গা মাখা মশলা দিয়ে রুই মাছের বড় পিস ভাজারুই কাবাব ফ্রাই, তেল কই, পটল দোলমা, স্টাফড্ আলু, চিংড়ির মালাইকারি এবং শেষ পাতে থাকছে আলু বোখরার চাটনি। সপরিবারের ওই খাবারের স্বাদ নিতে আগ্রহীরা এ দিন সন্ধ্যা থেকেই টেবিল বুক করা থেকে খাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বারবার বেজেছে রেস্তোরাঁর ফোন।
নতুন বছরের প্রথম দিনে নানা পদ চেখে দেখতে সপরিবার হাজির হয়েছিলেন জিয়াগঞ্জ শ্রীপত্ সিংহ কলেজের সংস্কৃতের বিভাগীয় প্রধান বাবিন পট্টনায়েক। তিনি বলেন, ‘‘বছরের ৩৬৪ দিন তো বাড়িতে পরিচিত জনের হাতের রান্না খাই। এক দিন তো বাড়ির ওই রান্না হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খেতে ইচ্ছে করে। সে জন্যেই আসা।’’ তাঁর মতো অনেকেই ভিড় জমান নানা রেস্তোরাঁয়।
হোটেলের জন্মদিন উপলক্ষে বর্ষবরণের দিনে বিশেষ বাঙালি রান্না খাইয়েছে সোনালী বাংলা। হোটেলের মার্কেটিং ম্যানেজার নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “খাওয়া-দাওয়া করতে যে সব অতিথি এসেছেন, তাঁদের হাতে বিশেষ উপহার তুলে দেওয়া হয়েছে।” হোটেলের দুপুর ও রাতের মেনুতে ছিল ইলিশের নানা পদ। যেমন ইলিশ ভাপা, ইলিশ সরষে, পোস্ত ইলিশ, দই ইলিশ। এছাড়াও ছিল চিংড়ির মালাইকারি ও মাটন কোর্মা। বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয় পমফ্রেট ফ্রাই ও ভেটকি মাছের ফিস ফ্রাই। শেষ পাতে ছিল পায়েস।
বহরমপুর শিল্পতালুকের মধ্যে গড়ে ওঠা নামী হোটেল ‘ফেম’-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রলয় তেওয়ারীর অভিজ্ঞতা, ‘‘এর আগে বর্ষবরণের দিনে দেখা গিয়েছে গরমের কারণেই হোক বা অন্য কোনও কারণে দুপুরে অতিথিদের ভিড় হয় না। আর ডিনারে বাঙালি রান্না কেউ খেতে চান না। তাই বাঙালি রান্নার কথা ভাবা হয়নি। তবে বর্ষবরণের সন্ধ্যায় মেনুতে বিশেষ ভাবে তৈরি কাবাবের পদ ছিল। অন্য দিকে, শুক্তো, এঁচোড়ের তরকারি, মাছের বিভিন্ন পদ, মোচার ঘণ্টো দিয়ে দুপুরের মেনু সাজানো হয় ‘আহার’-এ, জানালেন হোটেল মালিক অরিন্দম মণ্ডল। ভুরিভোজের আয়োজনে খামতি রাখেননি সানসাইন হোটেল মালিক রাম সাহা এবং বহরমপুর লজ মালিক চন্দন সরকারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy