ক্ষতিপূরণ পাওয়া হয়নি যাঁদের। নিজস্ব চিত্র
প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম ওঠেনি, কিন্তু যাঁদের ক্ষতি নামমাত্র বা একটুও নয় তাঁরা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অ্যাকাউন্টে চলে এসেছে ২০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ! নবদ্বীপ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে এমন অভিযোগ উঠেছে।
যেমন চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮৪ নম্বর বুথে। সেখানে বাস করেন মধ্য পঞ্চাশের সাগরিকা সরকার। স্বামী মারা গিয়েছেন ২০০৬ সালে। মেয়েকে নিয়ে চরম অভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। এর মধ্যে আমপানের রাতে উড়ে় গিয়েছিল বাড়়ির টিনের চাল, ঘরের বেড়ার দেয়াল। কিন্তু অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে খোঁজখবর নিতে কেউ আসেনি। ক্ষতিপূরণের তালিকায় নামও ওঠেনি।
ওই বুথেই বাড়ি বছর সত্তরের কানন দেবনাথের। তার দুই ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। তিন জনের পেট চালান কানন মন্দিরে ভিক্ষা করে। আমপানে দুমড়ে গিয়েছে তাঁর টিনের ঘর। তবুও কানন দেবনাথের নাম সরকারি ক্ষতিপূরণের তালিকায় ওঠেনি। ওই পঞ্চায়েতের আরেক বাসিন্দা ১৮৮ নম্বর বুথের নিরুপমা দেবনাথের ঘর বলতে এখন কিছুই নেই। ছাদের জায়গায় প্লাস্টিকের আচ্ছাদন টাঙিয়ে রেখেছেন। পরনের কাপড় দিয়ে চার পাশ ঘিরে কোনওরকমে আড়াল তৈরি করে রয়েছেন দেড়মাস হতে চলল। তবুও ক্ষতিপূরণ তালিকায় তাঁর নাম নেই! বুধবার বললেন, “ঝড়ের পর আমাদের বুথের মেম্বার এসে ছবিটবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নাম ওঠেনি। তবে ওই তালিকা নিয়ে গোলমাল হওয়ার পর ফের নতুন করে আবেদন করা হচ্ছে শুনেছি।’’
নিরুপমা দেবনাথের বাবা বাবলু সরকার চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগর পঞ্চায়েতে সিপিএমের শাখা সম্পাদক। নিরুপমা বলেন, ‘‘এর আগে যখন ঘর তৈরির আবেদন করতে গিয়েছিলাম তখন আমাদের বুথের তৃণমূল নেতারা ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘বাবা যবে ভোটে জিতবে তবে ঘর পাবে।” যদিও পঞ্চায়েতের স্থানীয় প্রধান তৃণমূলের রীনা দাস সব অভিযোগ উড়িয়ে গোটা ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “এই পঞ্চায়েত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে মোট ২৩৩ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। বিরোধীরা অহেতুক রাজনীতি করছে। সিপিএম ক’দিন আগে এসে ডেপুটেশন দিয়েছে। তাতে আরও আড়াইশো জনের নামের তালিকা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওদের দেখিয়েছি যে, ওই তালিকায় এমন নাম রাখা হয়েছে যাঁর পাকা বাড়ি আছে।” পাল্টা সিপিএমের বাবলু সরকার বলেন, “যাঁদের বাড়ি অক্ষত আছে তাঁরাই টাকা পেয়েছেন এবং তাঁরা সকলেই তৃণমূলের নেতা বা কর্মী। যাঁরা টাকা পাননি তাঁদের কাছে এক বার খোঁজ নিলেই বোঝা যাবে রাজনীতির নামে দুর্নীতি কারা করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy