Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাজানো বাগানে ফণীর ছোবল-ভীতি

একই ভয়ের ছবি গোটা নদিয়ার গোটা কৃষকমহলে। শুধু পাকা বোরোধান বলে নয়, আম-লিচু-কলা-পেঁপে-পান-মরশুমি আনাজ এবং ফুলের চাষিরা কার্যত আতঙ্কের প্রহর গুনছেন।

ধেয়ে আসছে ফণী। পুরীর সমুদ্রসৈকত। ছবি: এপি

ধেয়ে আসছে ফণী। পুরীর সমুদ্রসৈকত। ছবি: এপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

গোটা জেলা যখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত সে দিন টানা চোদ্দো ঘণ্টা লিচু বাগানে জল দিয়েছেন দুর্গাপ্রসাদ তিওয়ারি। তাঁর চার বিঘা লিচু এবং তিন বিঘা আমবাগানে এ বারের গত কয়েক বছরের মধ্যে সেরা ফলন হয়েছে। তাই গাছের যত্নআত্তির পিছনে ইতিমধ্যেই হাজার বিশেক টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছেন। কিন্তু এখন ফলের আশা দূরে থাক, ফণীর দাপটে গাছগুলি অক্ষত থাকবে কিনা সেই চিন্তায় ভয়ে কাঁটা হয়ে আছেন নদিয়ার জাহাঙ্গিরপুরের বাগিচা ফসলের কারবারি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগানের উপচে পড়া লিচুগাছগুলি দেখিয়ে দুর্গাবাবু বলেন, “অনেক দিন পর গাছে এত লিচু ধরেছিল। ভোটের সময় দু’দিন লু বইছিল। তাই আলাদা ভাবে বাগানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করে জল দিলাম। এখন ঝড়ের কথা যা শুনছি তাতে আম লিচু দূরে থাক ফলের গাছগুলিকে বাঁচাতে পারব কিনা তার জন্য আতঙ্ক হচ্ছে।”

একই ভয়ের ছবি গোটা নদিয়ার গোটা কৃষকমহলে। শুধু পাকা বোরোধান বলে নয়, আম-লিচু-কলা-পেঁপে-পান-মরশুমি আনাজ এবং ফুলের চাষিরা কার্যত আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম—সর্বত্র লোকসভা ভোটের খবরকে পিছনে ঠেলে দিয়েছে ফণী। উপগ্রহ চিত্র এবং আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী, প্রতিনিয়ত শক্তি বাড়িয়ে ওড়িশা উপকুলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রচণ্ড গতির ঘূর্ণীঝড়। যার প্রভাবে আগামী শনি এবং রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাষ রয়েছে।

কৃষিদফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করার পাশাপাশি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। জেলা জুড়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। বড় আন্দুলিয়ার কৃষক রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, “ভোটের জন্য ধানকাটার লোক মিলছে না। তবে ফণীর কথা এত প্রচার হয়েছে যে, চাষিরা যে ভাবে পারছেন মাঠের ধান কাটার ব্যবস্থা করেছেন। দরকারে কিছু বেশি টাকা দিয়েও চাষি ধান ঘরে তুলে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে।” তবে গোটা জেলার কমবেশি পঁচাত্তর হাজার হেক্টর জমির কতটা অংশের পাকাধান শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা যাবে তা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ধানের পাশাপাশি ফণী নিয়ে চরম চিন্তায় তেহট্ট করিমপুরে কলা এবং পান চাষি বা নদিয়ার রাণাঘাট অঞ্চলের ফুলচাষিরা। করিমপুর এলাকার কৃষি অর্থনীতি মূলত কলা এবং পান চাষের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। প্রবলঝড়ে সেই কলাগাছ কীভাবে রক্ষা করবেন বুঝে পাচ্ছেন না চাষিরা। ঝড়ের যে তীব্রতার কথা বলা হচ্ছে, তাতে কলা এবং পেঁপের মতো নরম কাণ্ডযুক্ত গাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। হোগলবেড়িয়ায় শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “ঝড় নিয়ে কৃষি দফতর থেকে মাইকে প্রচার করার ফলে লোকে যতটা পারছে গাছ ও ফল-ফুল রক্ষার চেষ্টা করছে। কালবৈশাখীর সময়ে কলাগাছ বাঁচাতে দুটো সরু বাঁশ আড়াআড়ি বেঁধে ঠেকো দেওয়া হয়। কিন্তু এতে অনেক সময় লাগে। এখন বাজারে সরু বাঁশের যেমন অভাব তেমনই কাজের লোকেরও অভাব। ক্ষেতমজুরদের চাহিদা মতো পয়সা দিলেও লোক মিলছে কই?”

তৎপরতা শুরু হয়েছে করিমপুর ১ এবং ২ নম্বর ব্লকের প্রতিটি গ্রামে। মূলত ওই এলাকাতেই পানের চাষ হয় নদিয়ায়। এক নম্বর ব্লকের পান চাষি বিশ্বানাথ বিশ্বাস জানান “কৃষি দফতরের সতর্কবার্তা এবং টেলিভিশন খবরের কাগজে বারে বারে ঝড়ের কথা বলছে দেখে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। পানের বরজের মাঝ বরাবর লোক চলাচলের রাস্তায় গোট গোটা বাঁশ এবং নারকেল দড়ির টানা দিয়ে বরজ পোক্ত ভাবে বেঁধে ফেলা হয়েছে। উপরে বিছানো হয়েছে খড়।” তবে মাটি থেকে প্রায় ছ’ ফুট উচ্চতার পান বরজ তাতেও কতটা সুরক্ষিত থাকবে তা নিয়ে চিন্তা রয়েই গেল চাষিদের। একই ভাবে রজনীগন্ধার ডাঁটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ফুলচাষিরা।

নদিয়ার উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। মাইকে প্রচার চলছে। শেষ অবধি দুর্যোগ ঠিক কী চেহারা নেবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। যদি ঝড়ের তীব্রতা কম থাকে তা হলে বিপদ তুলনায় কম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE