Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Society

উনিশ বছর পরে আব্বাকে ফিরে পেলেন রেজিনা

দুই বাবা এক মেয়ের এই কাহিনিতে কোনও এক জনকে যে হারতেই হবে।

আব্বা ও ভাইজানের সঙ্গে রেজিনা। নিজস্ব চিত্র

আব্বা ও ভাইজানের সঙ্গে রেজিনা। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৬:৪৮
Share: Save:

দেখা হল উনিশ বছর পরে। কিন্তু তার পরেও চিনতে কোনও ভুল হল না। রেজিনা খাতুন ছুটে গিয়ে বাবা গাফফার গাজিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে বললেন, ‘‘আব্বা, বাড়ি যাব।’’ তখন চোখের জল মুছছেন ওয়াসেফ মির্জাও। এই একুশ বছর ধরে রেজিনাকে তিনিই যে মেরে মতো করে মানুষ করেছেন।

কোথায় উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার ছোট্ট গ্রাম তরণিপুর আর কোথায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ব্রাহ্মণীগ্রাম। দুই বাবা এক মেয়ের এই কাহিনিতে কোনও এক জনকে যে হারতেই হবে। ওয়াসেফ বলেন, ‘‘জন্মদাতার দাবি বেশি। আমি রেজিনাকে খুশি মনেই তুলে দিয়েছি তার আব্বার হাতে।’’

গাফফার গাজির তিন মেয়ে, এক ছেলে। নিজে রাজমিস্ত্রির কাজে বেশিরভাগ সময় থাকেন উত্তরপ্রদেশে। তাই বছর আটেকের মেয়ে রেজিনাকে কলকাতার এক বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দেন মা দেলওয়ারা বিবি। সেই বাড়ি থেকেই রেজিনা বেরিয়ে যায় ২০০১ সালের ১৫ অগস্ট। তারপর ট্রেনে কেমন করে সে পৌঁছে যায় কাটোয়া রেল স্টেশনে। এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে সেখানেই তাকে খিদের জ্বালায় ছটফট করতে দেখেন মুর্শিদাবাদের ব্রাহ্মণীগ্রামের ওয়াসেফ মির্জা ও তাঁর বোন ময়না বিবি। ওয়াসেফ বলছেন, “অসংলগ্ন কথাবার্তা, মুখ চোখে অসহায়তা। কিন্তু বাড়ি, নাম কিছুই বলতে পারল না। খাবার কিনে দিতে পাশ ঘেঁষে বসে পড়ল। যেন কত চেনা জানা। ওকে আর ছেড়ে দিতে পারিনি।”

ওয়াসেফের ভাগ্নে মনিরুজ্জামান শেখ দীপু বলছেন, “মামা বিয়ে থা করেননি। বাড়িতে ছোট ছেলে মেয়েও কেউ নেই। রেজিনাকে মেয়ের মতো ভালবাসে। মেয়েটিকে দেখে অসুস্থ বলে মনে হত।’’ তাঁরা তখন কলকাতায় চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। তার পরে রেজিনা নিজের নাম বলে। তার পরে জানা যায়, গ্রামের নাম চণ্ডীপুর, বাবার নাম গাফফার। মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘শত চেষ্টাতেও আর কিছু বলতে পারেনি।’’ রাজ্যে অসংখ্য চণ্ডীপুর রয়েছে। তাই তাঁরা আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।

সম্প্রতি মাস তিনেক আগে সাগরদিঘিতে সর্ষের জমি থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসেন স্বরূপনগরের গোলাম মোস্তাফা। তিনি বাড়ি ফিরে খবর নিয়ে জানতে পারেন, গাফফারের মেয়ে বহু কাল ধরে নিখোঁজ। গাফফার কিন্তু তখনও নিশ্চিত ছিলেন না। ছেলেকে নিয়ে চলে সোজা সাগরদিঘি চলে আসেন। রবিবার দুপুরে সাগরদিঘি থানায় গিয়ে রেজিনা ভাইকে চিনতে পেরেই ছুটে গিয়ে ভাইজান বলে জাপটে ধরে তাকে। সাগরদিঘির ওসি সুমিত বিশ্বাস বলছেন, “এই ফিরে পাওয়া যেন স্বপ্নের মতো।’’ রেজিনার দুঃখ শুধু একটাই, তাঁর মায়ের সঙ্গে আর দেখা হবে না। দেলওয়ারা মারা গিয়েছেন চার বছর হল।

রেজিনাকে আদালতের নির্দেশে গাফফারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফেরার পথে বারবার পিছন ফিরে তাকিয়েছেন রেজিনা। ফেলে যাচ্ছেন যে তাঁর সারা কৈশোরটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Society Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE