Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

খুনের কারণ অজানা, দেহ ফিরল ঘরে

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ত্রিশের মহিবুল খান গত‌ ২০১৭ সালের মার্চ মাসের ১২ তারিখে স্থানীয় এক দালাল মারফত দুবাইয়ে কাজের জন্য বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন।

মহিবুলের স্ত্রী-ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

মহিবুলের স্ত্রী-ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হোগলবেড়িয়া  শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

দিন পনেরো আগে আবুধাবিতে খুন হওয়া শ্রমিকের মৃতদেহ ফিরল বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ হোগলবেড়িয়া থানার কুচাইডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছয়।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ত্রিশের মহিবুল খান গত‌ ২০১৭ সালের মার্চ মাসের ১২ তারিখে স্থানীয় এক দালাল মারফত দুবাইয়ে কাজের জন্য বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন। তাঁকে দুবাইয়ের কাজ দেবে বলে নিয়ে গেলেও পরে তাঁকে আবুধাবির উজির নামে একটি গ্রামে কৃষি-শ্রমিকের কাজ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মহিবুলের সঙ্গে থাকতেন মুর্শিদাবাদের সীতানগরের কাবাতুল্লা মণ্ডল ও উত্তরপ্রদেশের শ্যাম ও অমরেশ নামে দু’জন। ৬ অগস্ট সকালে শ্যাম মহিবুলের পেটে ছুরি মেরে খুন করে।

মহিবুল খানের স্ত্রী রোজিনা বিবি বলেন, “অগস্টের ৪ তারিখে আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়। তার পর দু’দিন বেশ কয়েক বার ওর ফোন থেকে মিসকলড এসেছিল। কিন্তু ফোনে পাওয়া যায়নি। ৭ আগস্ট দুপুর বারোটা নাগাদ স্বামীর ফোন থেকে ফোন করে জানান হয়, দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি আমার স্বামীর পেটে ছুরি মেরে পালিয়ে গিয়েছে। তার পরেও স্বামীর মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পাইনি। রাতে জানতে পারি স্বামী সত্যিই খুন হয়েছেন।’’

এদিন তাঁর স্বামীর দেহ ঘরে ফেরার পর রোজিনা আক্ষেপ, ‘‘প্রত্যেক মাসে স্বামীর পাঠানো রোজগারের টাকায় সংসার চলত। এখন ছোট ছোট দুই ছেলে নিয়ে কী ভাবে সংসার চলবে, জানি না।”

মৃতের সহকর্মী কাবাতুল্লা মণ্ডল আবুধাবি থেকে বিমানে করে মৃতদেহের সঙ্গে দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছোন মঙ্গলবার সকালে। তাঁর কথায়, “সেদিন সকালে কাজে যাওয়ার আগে আমি রুটি বানাচ্ছিলাম। সেই সময় অমরেশ চিৎকার করে বলে যে, মহিবুলকে শ্যাম ছুরি মেরেছে। ছুটে গিয়ে দেখি মহিবুল মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে! শ্যাম ততক্ষণে পালিয়েছে। আমরাই পুলিশে খবর দিই। পুলিশ এসে শ্যামের পরিচয়পত্র দেখে শনাক্ত করে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওকে গ্রেফতার করে।’’ তিনি আরও জানান, এর পর পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে যায়। তবে অভিযুক্ত শ্যাম ছাড়া বাকিদের রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর কাবাতুল্লাই সকালে মহিবুলের বাড়িতে ফোন করে তাঁর মৃত্যু সংবাদ জানান।

শ্যাম এবং মহিবুলের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে ঝামেলা চলছিল কিনা, সে বিষয়ে কিছু খোলসা করে বলতে চাননি তিনি। কাবাতুল্লার দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাই কী কারণে এই খুন, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

গ্রামের রফিক খান জানান, গরিব পরিবারের ছেলে মহিবুলের মৃত্যুর খবর শুনেই স্থানীয় বিধায়ক মহুয়া মৈত্রকে জানানো হয়েছিল। অত দূর থেকে দেহ ফিরিয়ে আনা পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই বিধায়কের তৎপরতায় সরকারি খরচে এ দিন মৃতদেহ বাড়িতে ফিরেছে। বিধায়ক মহুয়া মৈত্র জানান, দুঃস্থ পরিবারের মহিবুল পেটের তাগিদে ভিন দেশে কাজে যান। এই ঘটনার কথা শোনার পরে বিদেশ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abu Dhabi Murder আবুধাবি খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE