Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফিরেও ফিরলেন না তাসের

সাঁতরাগাছি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া তাসের সর্দারের (৬১) থেঁতলে যাওয়া দেহটা বুধবার অন্ধকার সন্ধ্যায় উঠোনে নামানোর পরে উথালপাথাল কাঁদছিলেন স্ত্রী সামিনা বিবি। এক টানা বলে চলেছেন, ‘‘ফিরলে কি এ ভাবে ফিরতে হয় গো!’’

শোক: হরিহরপাড়ার নশিপুর গ্রামের সামিনা বিবি। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

শোক: হরিহরপাড়ার নশিপুর গ্রামের সামিনা বিবি। ছবি: সঞ্জীব প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:১৪
Share: Save:

ফিরে যাওয়ার আর কোনও ইচ্ছেই ছিল না তাঁর। কেরল থেকে দেশ-ফিরতি ট্রেন ধরার আগে তাই বলেছিলেন, ‘‘আর পারছি না গো, গাঁয়ে ফিরলে আর এ মুখো
হব না।’’

সাঁতরাগাছি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া তাসের সর্দারের (৬১) থেঁতলে যাওয়া দেহটা বুধবার অন্ধকার সন্ধ্যায় উঠোনে নামানোর পরে উথালপাথাল কাঁদছিলেন স্ত্রী সামিনা বিবি। এক টানা বলে চলেছেন, ‘‘ফিরলে কি এ ভাবে ফিরতে হয় গো!’’

মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক মাত্র ছেলেকে আঁকড়েই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তাসের। বিপত্তি বেধেছিল বছর কয়েক আগে। বছর চব্বিশের সামিদুল সর্দ্দার কলকাতায় গিয়েছিল রাজমিস্ত্রির কাজে। সেখানে বাঁশের মাচায় কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে ডান উরুতে চোট পান। সেই থেকে কাজ বন্ধ। হাসপাতাল ঘুরে এখন বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। দৈনন্দিন খরচ ৪০০ টাকা। একটা অপারেশনের করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা, খরচ পড়বে প্রায় দু’লক্ষ টাকা। সেই খরচ চালাতেই তাসের পাড়ি দিয়েছিলেন কেরলে। হরিহরপাড়ার নশিপুরে মাটির বাড়ি, ছাউনি এখনও টালির। সেখানে বসেই সামিদুল বলছিলেন, ‘‘দিদি মর্জিনা বিবির কাছে বাবার নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। আমরা তো প্রথমে বুঝতেই পারিনি। সুস্থ একটা মানুষ এমন করে চলে যাবে!’’

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আদ্যন্তই গরীব পরিবার। তার উপর টানা কয়েক মাস ধরে অসুস্থ সামিদুলের চিকিঞসা করাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা পরিবারটির। চিকিৎসকরে পরামর্শ মতো অস্ত্রোপচারও করতে পারছেন না সামিদুল। সামিনা ফের ডুকরে ওঠেন, ‘‘মানুষটাও চলে গেল, ছেলেটাও আর দু’পায়ে খাড়া হবে নাকো!’’ তাসেরের সঙ্গে গ্রামেরই দুই শ্রমিক কেরল থেকে ফিরছিলেন। জখম হয়েছেন তাঁরাও। তাঁরা এখন হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানিয়েছে তাসেরকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। কি করে হল এমন দুর্ঘটনা?

হাসপাতাল থেকেই ফোন করেছিলেন তাসেরের সঙ্গী ককিল খান। এ গ্রামেরই মানুষ। তিনি জানাচ্ছেন, সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনে পর পর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে ঢুকছিল ট্রেনগুলি। লোকে-লোকারণ্য প্ল্যাটফর্ম। ভিড় সামাল দিতে আচমকাই লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে রেল পুলিশ। বিপত্তি বাধে তাতেই। হরিহরপাড়া মোড় থেকে রুকুনপুর যাওয়ার রাস্তায় নশিপুর গ্রাম। পাকা রাস্তা থেকে কিছুটা ইঁটের রাস্তা পেরিয়ে গেলেই সর্দ্দার পাড়া। মাটির বাড়ির সামনে কয়েকশো মানুষের ভিড়। সরকারি ভাবে ব্লক প্রশাসনের লোক, স্থানীয় বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি সকলেই উপস্থিত।

নশিপুরের বাড়িতে গিয়ে জেলাপরিষদের সভাধিপতি মোসারফ হোসেন বলছেন, ‘‘খুব দরিদ্র পরিবার। সরকারের পক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফান্ড থেকে এক কালীন পাঁচ লক্ষ্য টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমি মৃতের বাড়ি দেখে গেলাম তারা একটা ঘর যেন সরকারি ভাবে পায় তারও চেষ্টা করব।’’ আশ্বাস দিয়েছেন হরিহরপাড়া ব্লকের যুগ্ম বিডিও উদয় পালিতও, ‘‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা করা সম্ভব করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Santragachi Stampede Dead Body Hariharpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE