—প্রতীকী ছবি।
ট্রেনের নিঝুম লাইনটা হয়ে উঠেছিল বার কাউন্টার, আর লোহার পাত যেন বার-টুল! গ্রামের কোল ঘেঁষে যাওয়া সেই লাইনের উপরে বসেই পাঁচ ইয়ারি মদ্যপান করছিল। কুয়াশা ঘেরা সন্ধে। শীত-শীত চরাচর, নেশা জমে উঠেছিল দ্রুত। নিঃশব্দে ট্রেন এসে পড়লেও খেয়াল করেননি কেউ। তবে ট্রেনের ভোঁ আর তীব্র আলোয় অন্যরা সচকিত হয়ে সরে গেলেও বছর বাইশের ওই যুবক টলোমলো অবস্থায় ‘রুখে’ দাড়িয়ে ছিলেন। ছুটন্ত ট্রেন কি সে আব্দার মানতে পারে? ধাক্কা মারে ছোটন সরকারকে (২২)। ঘটনাস্থলেই ছিটকে পড়ে মারা যান তিনি।
তার সঙ্গী সাথীরা বলছেন, ‘‘ট্রেন আসছে দেখে আমরা ছোটনের হাত ধরে টানতে থাকি। সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু ওর এক কথা, ‘আমি বলছি ট্রেন ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে।’’ নেশার ঘোরে বেঘোরে প্রাণ হারালেন তাই ছোটন।
বন্ধুদের সঙ্গে চলছিল আড্ডা। গ্রামের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রেল লাইনের উপরই বসে ছিল তারা জনা পাঁচেক। আর তখনই এসে পড়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। “চল ট্রেন আসছে” বলে বন্ধুরা বহু চেষ্টা করে তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু কে শোনে সে কথা? শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের চোখের সামনেই ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে লাইন থেকে প্রায় ৬ ফুট দূরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। ঘটনাটি রঘুনাথগঞ্জের খুড়িপাড়া গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যেয়।
রেল পুলিশের জঙ্গিপুরের আই সি তপন দাস জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই রেল পুলিশ ছুটে যায় সেখানে। ওই গ্রামের রেলগেট থেকে ১৫ মিটার দূরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় ছিল ওই যুবক। ওই ঘটচনার পরে এলাকায় লাইন প্রহরা শুরু করেছে জিআরপি।
গরম কালে ট্রেন লাইনে বসে থাকার রেওয়াজ নতুন নয়। গ্রামের মানুষদের অনেকেরই, বিশেষ করে, কম বয়সী ছেলেদের আড্ডাস্থলই রেল লাইন। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার জেরে গত কয়েক বছরে অন্তত সাতটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। তা বলে, শীতের মুখে এ ভাবে লাইনে বসা তেমন পরিচিত দৃশ্য নয়।
ছোটনের এক বন্ধু বলেন, ‘‘আমরা ট্রেন আসছে দেখে বার বার চিৎকার করতে থাকি। প্রথমে ও সরেও গিয়েছিল। আচমকা ওর মাথায় চাপল, ট্রেন রুখব, লাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে বলতে থাকল, ‘থেমে যাও এ বার থেমে...’কথা শেষ হয়নি ট্রেনটা ওকে ছিটকে দিয়ে চলে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy