ধনতেরাসে গয়নার কেনাকাটা। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
সোনার প্রতি প্রেম মানুষের চিরকালীন। অপরাজেয় সম্রাট থেকে সাধারণ-ছাপোষা মানুষ— সোনার হাতে সোনার কাঁকনের রোম্যান্টিকতা থেকে রেহাই পাননি কেউ। সোনার গয়না নিয়ে বাঙালিও সেই পথেরই পথিক।
ভিনরাজ্যের উৎসব ধনতেরাসের আগমন বঙ্গদেশে মাত্রই কয়েকটা বছর আগে। কলকাতার বৌবাজার থেকে নবদ্বীপের বড়বাজার ধনতেরাস নিয়ে মানুষের উন্মাদনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার স্থানীয় বাজার বন্ধ থাকার দিন হলেও শুধুমাত্র ধনতেরাস বলে এদিন নবদ্বীপের সোনার দোকান খোলা রাখতে বাধ্য হন স্বর্ণ-ব্যবসায়ীরা।
রুপো বা সোনার কয়েন, শো পিসেই এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল বাঙালির ধনতেরাসের কেনাকাটা। যদিও ব্যবসায়ীরা সোনা, হিরের গয়নার দামে কিংবা মজুরিতে বিশেষ ছাড় দেন এই উপলক্ষে। কিন্তু এবারে খোদ ব্যবসায়ীদেরও চমকে দিয়ে পাল্লা দিয়ে ভারী গয়না কিনছেন মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে। বহু জন বিয়ের গয়নাও এ দিনেই ডেলিভারি নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, ধৈর্য ধরে তিন থেকে চার ঘণ্টা মানুষ অপেক্ষা করেছেন গয়না কিনতে।
নবদ্বীপের স্থানীয় বাজার সোমবার অর্ধদিবস এবং মঙ্গলবার পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে। কিন্তু ধনতেরাস উপলক্ষ্যে সোমবার গোটা দিন এবং মঙ্গলবার এক বেলা কমবেশি কেনাবেচা চলল প্রতিটি সোনার দোকানে।
দু-আড়াইশো টাকার রুপোর মুদ্রা থেকে দু’লক্ষ টাকার জড়োয়া নেকলেস— সবই বিক্রি হল ধনতেরাসের বাজারে।
যদিও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মাত্র পাঁচ বছর হল ধনতেরাসের চল হয়েছে এই সব অঞ্চলে।
নবদ্বীপের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সভাপতি গোপালচন্দ্র মল্লিক বলেন, “এবারে কেনাকাটার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।” তিনপুরুষের স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপালবাবু বলেন, ‘‘ছোটবেলায় মনে আছে বিজয়া দশমীর দিন অনেক মানুষ সোনা কিনতেন। সে কারণে বাবা একবেলা দোকান খুলে রাখতেন। সেটা বন্ধ হয়ে এখন নতুন করে ধনতেরাসের দিন সোনা কেনার চল হয়েছে।’’
নবদ্বীপের এক ক্রেতা জয়দেব সাহা বলেন, “ধনতেরাসে সোনা-রুপো কিনলে ঘরে নাকি লক্ষ্মী আসে। এ কথা মানতে যদি অসুবিধাও থাকে, তা হলে সোনা কেনা হল। আগামী দিনের জন্য আমার কিছু সঞ্চয় হয়ে থাকছে। এ ভাবে ভাবলেই বা আপত্তি কোথায়?”
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, প্রধানত লক্ষ্মী-গণেশ খোদাই করা সোনা বা রুপোর কয়েনের বিক্রি বেশি হত। এক গ্রাম থেকে দশ গ্রাম ওজনের কয়েন বেশি বিক্রি ছিল। দাম তিনশো টাকা থেকে শুরু। এছাড়াও কানের দুল, হালকা গয়না, ঠাকুরের টিপ, ত্রিশূল, খাঁড়া জাতীয় জিনিসের বেশি বিক্রি। তালিকায় রয়েছে রুপোর তৈরি দু’হাজার টাকা বা পাঁচশো টাকার নোটও। কিন্তু এবার ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে।
নবদ্বীপের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুজিত কুমার দে বলেন, ‘‘ভারী সোনার গয়না থেকে হিরের গয়না— প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়েছে এবার। মধ্যবিত্ত চাকুরে থেকে ব্যবসায়ী সকলেই গয়নার অর্ডার দিয়েছেন এই শর্তে যে, ধনতেরাসের দিনেই ডেলিভারি দিতে হবে।’’
জানা গিয়েছে, বহু মানুষ এ দিন বিশ, পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড়, দু’লাখ টাকার গয়নাও কিনেছেন। শুধুমাত্র গয়না কেনার উৎসব হিসাবে ধনতেরাস ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে বাংলার ক্যালেন্ডারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy