বিলি হচ্ছে এই আয়ুষ্মান কার্ড। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বাড়ি-বাড়ি ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’ নিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। পৌঁছে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেওয়া স্বাস্থ্যবিমার কার্ড। সেই কার্ডে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কোনও উল্লেখ নেই। অথচ, কেন্দ্রের সঙ্গে মউ সই করে ঠিক হয়েছিল, এ রাজ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প মিশে যাবে রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে। প্রকল্পের নতুন নামকরণ হবে ‘আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যসাথী’।
রাজ্যকে ব্রাত্য রেখে স্বাস্থ্যবিমার যাবতীয় কৃতিত্ব মোদী সরকার এ ভাবে শুষে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে বৃহস্পতিবার রাগে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরের প্রশাসনিক সভায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নাম করে আক্রমণাত্মক মমতা বলেন, ‘‘সব কাজ আমরা করব, আর তুমি নরেন্দ্র মোদী দালালি করবে?’’ ওই মঞ্চ থেকেই আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে রাজ্যকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যে কার্ড নিয়ে এত কিছু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর দিনও জেলার সব প্রান্তে বিভিন্ন ডাকঘর থেকে সেই কার্ড বিলি হয়েছে।
ডাকঘর কেন্দ্রের অধীনে। কেন্দ্রের নির্দেশ তারা মানতে বাধ্য। ফলে চিঠি ও কার্ড বিলি তারা বন্ধ করতে পারে না। নদিয়া উত্তর পোস্টাল ডিভিশনের সুপার সুব্রত দত্ত কোনও মন্তব্য করতে না-চাইলেও অন্য এক কর্তার কথায়, “আমাদের দায়িত্ব তিঠি ও কার্ড বিলি করা। সেটা বন্ধ হবে না। তবে বিলিতে কোনও বাধা এলে বা প্রতিরোধ তৈরি হলে ঝুঁকিতে যাওয়া হবে না। তখন হয়তো থামাতে হবে।’’ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি না হলে বিলি চলবে। শুক্রবার শুধু নদিয়া উত্তর পোস্টাল ডিভিশনেই ৯৪০০ কার্ড বিলি হয়েছে, এবং তা হয়েছে নির্বিবাদে। দক্ষিণ ডিভিশনে একই ভাবে বাড়ি বাড়ি কার্ড গিয়েছে। কোথাও কোনও বাধা আসেনি।
এখন রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে? প্রকল্প থেকে রাজ্য সরে যাওয়ার পরেও কি কেন্দ্রের দেওয়া কার্ড এ রাজ্যে বিলি করতে দেওয়া হবে?
প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে তৃণমূলের জেলা নেতা, কেউই এখন এর উত্তর জানেন না। প্রত্যেকেই নবান্নের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। যত ক্ষণ না নির্দেশ আসছে তত ক্ষণ চিঠি বিলি চলছে।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রকল্প থেকে রাজ্য সরকার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। দলের ভূমিকা কী হবে সেটাও তিনি নির্দেশ দেবেন। এখনও কোন নির্দেশ আমরা পাই নি।” জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা অবশ্য হতাশ গলাতেই বলেছেন, ‘‘চিঠি আর কার্ড বিলি বন্ধ না হলে তো মোদীর যা প্রচার পাওয়ার পেয়ে যাবে। লোকে মনে করবে, মোদীই এই প্রকল্প চালাচ্ছেন।’’ আর এক নেতার কথায়, ‘‘ ডাকঘর কেন্দ্রীয় সংস্থা হওয়ায় তারা চিঠি বিলি নিজেরা বন্ধ করবে না। যদি ডাককর্মীদের কোথাও বাধা দেওয়া হয় একমাত্র তখন তাঁরা নিরস্ত হতে পারে। তখন আবার রাজ্যের দিকে আঙুল উঠবে যে তারা ইচ্ছে করে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, মানুষকে বিমার সুবিধা পেতে বাধা দিচ্ছে। ফলে যা সিদ্ধান্ত নিতে হবে খুব ভেবেচিন্তে নিতে হবে।’’
৩১ ডিসেম্বর নদিয়ায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড ঢুকেছে ডাক বিভাগে। তার মধ্যে নদিয়া উত্তর পোস্টাল ডিভিশনে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ও দক্ষিণ ডিভিশনে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কার্ড ঢুকেছে। পর দিন থেকে জেলার চারশো ডাকঘরে তা পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়। মমতার ঘোষণার আগে শুধু উত্তর পোস্টাল ডিভিশনেই ৭হাজার কার্ড বিলি হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy