Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামে ফের বারুদ-ছায়া

খুনের বদলা খুন— হামেশাই দেখে আসা কুচিয়ামোড়া বদলে গেছে বলেই মনে করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু আদতে কিছুই যে বদলাইনি সেটা প্রমাণ হলো শনিবার ভোরের সূর্য ওঠার আগে।

মৃত রহিদুলের পরিবারের হাহাকার ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

মৃত রহিদুলের পরিবারের হাহাকার ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

ছিন্ন মস্তক নিয়ে ফুটবল কিংবা রক্ত নিয়ে হোলি! কুচিয়ামোড়ার কাছে এটা নতুন ঘটনা নয়। বছর কয়েক আগে খুন জখমের আঁতুড়ঘর এই গ্রাম খানিক ঝিমিয়ে এসেছিল যেন, শনিবার গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে তিন তৃণমূল কর্মী খুনের পর গ্রামের মানুষ মনে করছেন ফের চেনা চেহারায় ফিরল কুচিয়ামোড়া।

খুনের বদলা খুন— হামেশাই দেখে আসা কুচিয়ামোড়া বদলে গেছে বলেই মনে করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু আদতে কিছুই যে বদলাইনি সেটা প্রমাণ হলো শনিবার ভোরের সূর্য ওঠার আগে।

এক সময় এলাকার শেষ কথা ছিল আলতাফ শেখ। পুলিশের খাতায় ১৩টা খুনের অভিযুক্ত আলতাফ সিপিএমের সম্পদ ছিল বাম আমলে। রাজনৈতিক তাস খেলতে কংগ্রেস একসময় হাতিয়ে নেয় তাকে। কিন্তু আবারও ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল যখন তখন বাম জামানা শেষ। পরে সৌমিক হোসেন তৃণমূলের ডোমকলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেয় আলতাফ। এমনকি পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব মেলে তার কপালে। আর আলতাফের এই উত্থান মেনে নিতে পারেনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করে আসা গ্রামের মুশাকলিম গোলাম গাউসরা। তাছাড়া স্থানীয় গড়াইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতও আধিপত্য খাটাতে শুরু করে আলতাফ। ঠিকাদারি নানা কাজ নিয়ে সংঘাত বাধে নিজেদের দলের মধ্যে। পুলিশের দাবি সেখান থেকেই খুন হয় আলতাফ। একটা সময় সিপিএম আর কংগ্রেস এর লড়াই রাজ্যে সরকার বদল এর পর কিছুটা হলেও থেমে যায়। কিন্তু উভয় পক্ষের বাহুবলীর শাসক দলে যোগ দেওয়ার পরে গন্ডগোল নতুন করে মাথাচাড়া দেয়। বছরখানেক থেকে সেই গন্ডগোল চরমে ওঠে, আর তারই জেরে একের পর এক খুন।

কুচিয়ামোড়া বাসিন্দা শামিম মোল্লা বলছেন, ‘‘একটা সময় খুনের পর খুনে জেরবার হয়ে পড়ে কুচিয়ামোড়া। একাধিক মামলায় জড়িয়ে পড়ে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার।’’

এ দিন ও গ্রামের পথে দেখা গিয়েছে একের পর এক পরিবার ব্যাগ, পুটলি নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন। তাদের সকলের কথা—‘‘সকাল থেকেই মাথার ওপর দিয়ে কানের পাশ দিয়ে শোঁ শোঁ করে ছুটে গিয়েছে গুলি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরপরে আর থাকি কি করে গ্রামে।’’

কেউ ফিরেছেন বাবার বাড়ি, কেউ আবার শ্বশুর বাড়ি। চোখেমুখে সকলের আতঙ্ক। পথে হাঁটতে হাঁটতে আক্ষেপের সঙ্গে অনেকেই বলেছেন ‘‘আমাদের গ্রামটা আবার বারুদে ছেয়ে গেল গো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE