Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মডেল স্কুল গড়তে শিক্ষকের বিনিময়

জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের মতে, এই বিপরীত চিত্রের পিছনে প্রধান কারণ হল শিক্ষকদের মানসিতকার পার্থক্য। আর সেই মানসিকতার পরিবর্তন করতে অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। ঠিক করা হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে মডেল স্কুল তৈরি করা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share: Save:

কোনও স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের টাকায় পড়ুয়াদের জন্য কম্পিউটার কিনছেন। আবার কোনও স্কুলের ফালি জমিতে করা হয়েছে আনাজের চাষ। যেখান থেকে রান্না হচ্ছে খুদে পড়ুয়াদের জন্য। এ রকমই অভিনব উদ্যোগের কারণে নজর কেড়েছে জেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল।

তবে এর উল্টো ছবিও রয়েছে। সে সব স্কুলের কোনওটিতে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করা হচ্ছে তো কোথাও নিয়মিত স্কুলে না আসার অভিযোগে শিক্ষকদের তালাবন্দি করে রাখছেন অভিভাবকেরা।

জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের মতে, এই বিপরীত চিত্রের পিছনে প্রধান কারণ হল শিক্ষকদের মানসিতকার পার্থক্য। আর সেই মানসিকতার পরিবর্তন করতে অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। ঠিক করা হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে মডেল স্কুল তৈরি করা হবে। বিভিন্ন মানদণ্ডে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকা স্কুলগুলিকে সামনে রেখে পিছিয়ে পড়া স্কুলগুলিকে তুলে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রমাপ্রসাদ রায় বলেন, “লক্ষ করে দেখেছি, বিষয়টা হল শিক্ষকদের মানসিকতার পার্থক্য। তার পরিবর্তন করে সমস্ত স্কুলকে একই উচ্চতায় তুলে আনতে চাইছি।”

নদিয়া জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৮৫টি। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সেরা স্কুলকে বেছে নেওয়া হবে। প্রাথমিক সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব স্কুল পিছিয়ে আছে সেগুলির শিক্ষকদের মাঝেমধ্যে নিয়ে আসা হবে সেই মডেল স্কুলে। সারা দিন রেখে দেখানো হবে কী ভাবে মডেল স্কুলের শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে স্কুলটি পরিচালনা করেন। কোথায় কোথায় কী কী পরিকল্পনা করে তাঁরা স্কুলের পড়ুয়াদের পড়াশোনার পাশাপাশি মিড ডে মিল-সহ পড়ুয়াদের চরিত্র গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যাতে পিছিয়ে পড়া শিক্ষকদের মনেও তেমন ইচ্ছা জাগে। যাতে তাঁরাও ফিরে গিয়ে নিজেদের স্কুলটিকেও সেই ভাবে তৈরি করার জন্য উদ্যোগী হন।

পাশাপাশি, কখনও কখনও ওই মডেল স্কুলের শিক্ষকদেরও নিয়ে যাওয়া হবে পিছিয়ে পড়া স্কুলে। সেখানেও তাঁরা সারা দিন থেকে পরামর্শ দিয়ে আসবেন। পরে আবার কোনও এক সময় গিয়ে তাঁরা দেখে আসবেন সেই পরামর্শ মতো কাজ হচ্ছে কি না। না হলে আবারও তাঁরা পরামর্শ দিয়ে আসবেন।

কিন্তু কেমন হবে সেই মডেল স্কুল? কোন মাপকাঠিতে তার বিচার হবে? প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলগুলিতে পাঁচটা ক্লাস ঘর, ন্যূনতম পাঁচ জন শিক্ষক, সর্বনিম্ন ১০০ জন পড়ুয়া থাকতে হবে। সেই সঙ্গে স্কুলটি হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন-প্লাস্টিক মুক্ত। থাকতে হবে সবুজ বাগান। সেটা আনাজের হতে পারে আবার ফলেরও হতে পারে।

যে স্কুলের শিক্ষকরা পড়াশোনার পাশাপাশি পড়ুয়াদের নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন, সংসদের ‘অ্যাকাডেমিক গাইড বুক’ মেনে যাঁরা নিয়মিত প্রার্থনা সঙ্গীতের আগে নীতিমূলক কথা বলেন বা আলোচনা করে থাকেন, যে সব স্কুল অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে তাঁদের নানা বিষয়ে সচেতন ও উৎসাহিত করার চেষ্টা করে সেগুলিকেই মডেল স্কুল হিসাবে চিহ্নিত করা হবে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তারা। সেখানেই গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসআই-দের বলা হয়েছে, দ্রুত মডেল স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে তালিকা পাঠাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Model School Teacher Exchange Program
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE