পার্থের ছবি হাতে দিদি গায়ত্রী। নিজস্ব চিত্র
একপাশে প্রদীপ জ্বলছে জ্বলজ্বল করে। শিলে রাখা চন্দন বাটা। ছোট প্লেটে ধান-দুর্বা। মেঝেতে পাতা হয়েছে আসন। শুধু ফোঁটা যার নেওয়ার কথা সেই মানুষটি নেই। কোনও দিন নিতেও আসবেন না। সে কথা যত মনে হচ্ছে চোখের জল বাগ মানছে না দিদির। তাঁর বিলাপ, ‘‘গত বছরও তো ফোঁটা নিল। কত আনন্দ করল। অথচ এ বছর আমার ভাইটা আর নেই।’’
নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলেন পার্থ চক্রবর্তী। চাকদহে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরপাড়ার পার্থ চাকরি পেয়েছিলেন এক বেসরকারি ব্যাঙ্কে। কাজ ছিল ‘লোন রিকভারি’ করা। তাই করতে গিয়েছিলেন কর্মস্থল ডোমজুড়ে। সেই থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তার পরের ঘটনায় শিউরে উঠেছিল গোটা বাংলা। খণ্ড খণ্ড আকারে উদ্ধার হয়েছিল তাঁর দেহ। মাথা উদ্ধার হয়েছিল আরও পরে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্তেরা।
কিন্তু সেই যে অন্ধকার নেমে এসেছিল চক্রবর্তী বাড়িতে, সে আঁধার আর কাটেনি।
ভাইফোঁটার দিন বাপের বাড়ি চলে আসতেন দিদি গায়ত্রী রায়। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ফোঁটা এঁকে দিতেন কপালে। সেই দিনগুলোর স্মৃতি যত মনে পড়ছে ততই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। তিনি বলেন, ‘‘কোনও দিন ভাবিনি, এ ভাবে ভাইকে হারাতে হবে।’’ ভাইয়ের ফটো তখন কোলে রাখা।
আরও পড়ুন: ব্যয় কমাতে জোর আগামী রাজ্য বাজেটে
গত ২৯ অগস্ট, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ হাওড়ার ডোমজুড় থেকে চাকদহে পার্থের বাড়িতে ফোন যায়। জানানো হয় নিখোঁজ রয়েছেন পার্থ। পরে উদ্ধার হওয়া দেহাংশ শনাক্ত করার জন্য পার্থের পরিবারের লোকজনকে ডোমজুড় থানায় ডেকে পাঠানো হয়। দেহের গঠন এবং অন্তর্বাস দেখে দেহাংশটি পার্থের বলে চিহ্নিত করেন তাঁর পরিবারের লোকেরা।
প্রতি বছরের মতো এ বারেও ভাইফোঁটার দিন সকালে আট বছরের ছেলে দেবমাল্যকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসেছেন পার্থের দিদি গায়ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘বছর তিনেক আগে ভাই চাকরিটা পায়। গত ভাইফোঁটায় খুব আনন্দ করেছিল। তার পর সব শেষ হয়ে গেল।’’
পার্থের খুড়তুতো বোন শ্রীপর্ণা চক্রবর্তী জানান, ‘‘দেখছেন বাড়িটার কী অবস্থা। মনে হচ্ছে বাড়িতে যেন কেউ নেই। বাড়ির প্রাণটাই যেন চলে গিয়েছে। সব সময় সবাইকে নিয়ে থাকতে ভালবাসত দাদা। আজ আমরা সবাই আছি। দাদাই শুধু নেই।’’ চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি পার্থর মা মনিকা চক্রবর্তী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আজ ওর কথা বারবার মনে পড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy