Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাঁচল না প্রিয় ইতি, হতাশ শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশীরাও

সকলের সব চেষ্টায় ইতি টানল ইতি নিজেই। দুপুর নাগাদ ফোনটা আসতেই শোকের ছায়া নেমে এল গোটা চৌধুরীপাড়ায়। এই ক’দিন ধরে পাড়ারই গৃহবধূ ইতি শর্মার (২২) সঙ্গে একযোগে লড়াইটা যেন চালিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার মহিলারাও।

তখনও বেঁচে ইতি। চিকিৎসার জন্যে চলছে টাকা সংগ্রহ।— নিজস্ব চিত্র।

তখনও বেঁচে ইতি। চিকিৎসার জন্যে চলছে টাকা সংগ্রহ।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

সকলের সব চেষ্টায় ইতি টানল ইতি নিজেই।

দুপুর নাগাদ ফোনটা আসতেই শোকের ছায়া নেমে এল গোটা চৌধুরীপাড়ায়। এই ক’দিন ধরে পাড়ারই গৃহবধূ ইতি শর্মার (২২) সঙ্গে একযোগে লড়াইটা যেন চালিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার মহিলারাও। রবিবার দুপুরে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু সংবাদটা আসতেই রিঙ্কু দত্ত, লিপি চৌধুরীদের লড়াইটাও থেমে গেল।

বছর দু’য়েক আগে তেহট্টের বাসিন্দা ইতির সঙ্গে বিয়ে হয় চৌধুরীপাড়ারই বাসিন্দা অখিল শর্মার। অল্প দিনের মধ্যেই ইতি আপন করে নিয়েছিলেন প্রতিবেশীদের। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে এক মুহূর্ত শান্তিতে কাটাতে পারেননি বলে পড়শিদের অভিযোগ। নিত্যদিন শ্বশুর-শাশুড়ির গঞ্জনা আর মদ্যপ স্বামীর শারীরিক অত্যাচার তাঁর প্রতি অনেককেই সহানুভূতিশীল করে তুলেছিল। আদরের ইতিকেই যখন চোখের সামনে পুড়তে দেখেছিলেন পাড়ার মহিলারা তখন তাঁরা নিজেদের ঠিক রাখতে পারেননি। সকলে মিলে ছুটে গিয়েছিলেন। দগ্ধ ইতিকে উদ্ধার করে ভর্তিও করেছিলেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। স্বামী অখিলকেও মারধর করে তুলে দিয়েছিলেন পুলিশের হাতে।

কিন্ত এখানেই শেষ নয়।

ইতির চিকিৎসা বাবদ খরচ কিছুটা হলেও তুলে নিয়েছিলেন প্রিয় প্রতিবেশীরাই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রীতিমতো চাঁদা তুলে সেই টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন ইতির বাবার হাতে। চিকিৎসার জন্য আরও টাকা প্রয়োজন শুনে রবিবারও চাঁদা তুলতে বেরিয়ে ছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে এল সেই ফোন! রিঙ্কু দত্ত, লিপি চৌধুরীরা চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, খুব খারাপ লাগছে। আমরা সকলে চেয়েছিলাম মেয়েটা বেঁচে ফিরুক। আমরাও সাধ্য মতো চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সব শেষ।’’ ‘‘সকলের সব চেষ্টায় ইতি টেনে দিয়ে চলে গেল মেয়েটা’’— বলছিলেন তাঁরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য ইতির উপরে শারীরিক অত্যাচার করা হত। কোনও কোনও দিন তা চরম আকার নিত। প্রতিবেশীরা ঠেকাতে গেলে তাঁদেরও গালিগালাজ করত মদ্যপ অখিল ও তাঁর পরিবার। ২৮ জুলাই সকালেও একই ভবে ইতির উপরে অত্যাচার শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগের দিন রাতে ইতিকে বেল্ট দিয়ে মারধর করে অখিল। কিছু সময় পরে তাঁরা অগ্নিদগ্ধ ইতিকে দেখতে পান। ছুটে এসে পড়শিরাই দরজা খুলে উদ্ধার করেন ওই বধূকে। ধরে ফেলেন অখিলকেও। ঘটানার দিনই পুলিশ অখিল ও তাঁর মা সাবিত্রী শর্মাকে গ্রেফতার করেছে। বাবা সুশীল পলাতক।

ইতির বাবা শিবশঙ্কর সূত্রধর কঠের মিস্ত্রি। সংসারের অবস্থাও তেমন ভাল নয়। মেয়ের চিকিৎসার ভার যে পুরেপুরি তাঁর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয় তা বুঝতে পেরে এগিয়ে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি এলাকার মহিলারা। কর্মসূত্রে দমদমে থাকেন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা বাবুয়া সাহা। অফিস শেষে প্রায় প্রতিদিন তিনি ছুটে গিয়েছেন হাসপাতালে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর শিবশঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘চোখের সামনে মেয়েটাকে বড় কষ্টে মরতে দেখলাম। কোনও মেয়ের জীবনে যেন এমন না হয়।’’

বাবা জেলে। মা শুয়ে লাশকাটা ঘরে। এখন কী হবে তাঁদের বছর খানেকের ছেলের?

উত্তর হাতড়ে চলেছেন সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eti Sharma Rinku Dutta krishnanagar nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE