Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাকরির টোপ, জালিয়াতি চক্র নিয়ে নীরব পুলিশ

স্থানীয়দের ক্ষোভ, অতীতে একাধিক বার প্রতারিতেরা রানাঘাট থানায় এই সব জাল জব-সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।

কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরির টোপ দিয়ে সেখানে ডাকা হয় জব সেন্টারে। প্রতীকী ছবি।

কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরির টোপ দিয়ে সেখানে ডাকা হয় জব সেন্টারে। প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০৭:৫০
Share: Save:

বহু বছর ধরেই রানাঘাটে চলছে জব সেন্টারের নামে জালিয়াতি চক্র। প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও হয়েছে। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এক সময় স্টেশন সংলগ্ন এলাকা ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রকাশ্যেই চলত এই সব কেন্দ্র। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরির টোপ দিয়ে সেখানে ডাকা হত। তার পর তাঁদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে দফায়-দফায় টাকা নেওয়া চলত। কয়েকদিন পরেই অবশ্য সংস্থাগুলি ঝাঁপ বন্ধ করে দিত। আর কেউ যদি চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চাইতেন, তাঁকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি পাঠানো হত।

মাঝে এই জব সেন্টার খুলে বসা প্রতারণা চক্রের রমরমা বন্ধ ছিল। বর্তমানে আবার তা শুরু হয়। যেমন, মিশন গেটের বিনপাড়ায় নিজেকে গৌতম মুখোপাধ্যায় পরিচয় দিয়ে এই কারবার চালাচ্ছেন এক যুবক। আর গৌতমের হয়ে বেকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোমনাথ নামের আরেক জন। ওই যুবক সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় নিজের ওই নামেই পরিচয় দেন। যদিও এলাকার লোকজনের সন্দেহ, আসলে যুবকের নাম সোমনাথ না-ও হতে পারে।

রবিবার ওই কেন্দ্র সম্পর্কে খবর প্রকাশিত হয়। যার জেরে এ দিন ওই কেন্দ্রটি বন্ধ রাখা হয়েছিল।

যদিও ফোনে যোগাযোগ করা হলে সোমনাথের দাবি, রানাঘাটে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই বন্ধ রয়েছে। সোমনাথ বলেন, ‘‘আমরা কাউকে ঠকাই না। তবুও লোকজন আমাদের দিকে আড়চোখে তাকান। তাই আপাতত আমরা এ সব বন্ধ রেখেছি। পরে আবার খুলব।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, এখন তাঁদের ‘ব্যবসা’ কলকাতার দিকে চলছে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ, অতীতে একাধিক বার প্রতারিতেরা রানাঘাট থানায় এই সব জাল জব-সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। কেউ থানায় নালিশ জানালে কয়েকদিন পুলিশ হম্বিতম্বি করে। তার পর আবার আগের অবস্থা ফিরে আসে। আবার খুলে যায় পয়সার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রতারণা চক্র।

সংশ্লিষ্ট জব সেন্টারের এলাকারই এক বাসিন্দা জানান, আসলে এর পিছনে রয়েছে এলাকার এক শক্তিশালী নেতা। সামনে না এলেও শাসকদলের জেলা স্তরের ওই নেতার ছত্রছায়াতেই দুষ্কৃতীরা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর আরও অভিযোগ, প্রতারিতেরা টাকা ফেরত চাইতে গেলেই তাঁদেরকে গলির ভিতরে নিয়ে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখানো হয়। ভয়ে কেউ-ই মুখ খুলতে পারেন না।

জেলার এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, ওই সব কেন্দ্রে চাকরির লোভে নাম লেখানোর অর্থ অবধারিত ভাবেই প্রতারিত হওয়া। তার পরেও কেন পুলিশ এ সবের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করছে না? রানাঘাটের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক লাল্টু হালদার বলেন, ‘‘এখন জব সেন্টারের উৎপাত অনেক কমে গিয়েছে। চোরাগোপ্তা কেউ কেউ হয়তো ক’দিনের জন্য চালাচ্ছে। তবে পুলিশ আরও সতর্ক নজরদারি চালাবে।’’

ততদিন পর্যন্ত সোমনাথদের ‘ব্যবসা’ চলতেই থাকবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranaghat Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE