রফিকের স্ত্রী-সন্তান। নিজস্ব চিত্র
সাইকেলের পিছনে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি বেঁধে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে মাছ ফিরি করতেন তিনি। ঘরে এক মেয়ে, তিন ছেলে, স্ত্রী আর বৃদ্ধ মা।
কাকভোরে সাইকেলে চেপে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণনগরে গিয়ে মাছ কিনে আনতেন। তার পরে এ গ্রাম সে গ্রাম ঘুরে ফিরি করে বেড়ানো। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে যা হাতে আসত, তাতেই ছ’টা প্রাণীর পেট চলত কোনও মতে।
সেই রফিক শেখই (৩৬) কিনা বোমা খেয়ে মরল! বিশ্বাসই করতে পারছে না বেতবেড়িয়া। অন্য দিনের মতো সোমবার ভোরে বেরিয়েছিলেন রফিক। আর ফেরেননি। ফিরেছে তাঁর মৃতদেহ। আর এক জন, পেশায় চাষি সামিম শেখ মরতে-মরতে কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছেন।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে নিজেকে সামলাতে পারছেন না রাবিয়া বিবি। আড়াই বছরের শিশু আচের আলিকে কোলে নিয়ে রাবিয়া খালি বলে চলেছেন, ‘‘ও কোনও দিন সে ভাবে কোনও পার্টি করত না। কেন ওকে মারল?’’ একমাত্র রোজগেরে মানুষটা খুন হয়ে গিয়েছে। পরিবারকে গ্রাস করছে অনিশ্চয়তাও। কাঁদতে-কাঁদতে রাবিয়া বলেন, ‘‘সংসারটার কী হবে, বলতে পারেন? কি খাব আমরা! এই বাচ্চাটার মুখে দুধ দেব কী করে?’’
অন্য দিন গ্রামে-গ্রামে মাছ ফিরি করে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতেন রফিক। এ দিন তার আগেই ঘটনাটা ঘটে যায়। তাই কিছুই মনে হয় নি কারও, যতক্ষণ না মৃত্যুর খবরটা বাতাসে ভেসে এসে বাড়ির দাওয়ায় আছড়ে পড়েছে। খবর শুনেই সন্তানদের নিয়ে গ্রামের প্রান্তে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন রাবিয়া। প্রতিবেশী, আত্মীয়েরাও গিয়ে জড়ো হয়েছেন সেখানে।
সকলকে রাবিয়া শুধু বারবার বলে গিয়েছেন, ‘‘ও কিন্তু গন্ডগোল করতে যায়নি। দেখো গে, মাছ বিক্রি করতে গিয়ে দুই দলের বোমার মধ্যে পড়ে গিয়েছে।’’ যদিও তা মানতে রাজি নন পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে রফিকের সাইকেল আর মাছের হাঁড়ি পড়ে থাকার কথা। তা তো ছিল না।
কিন্তু সে সব যুক্তির কথা আপাতত কানেই ঢুকছে না রাবিয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy