হিজলের চাষি ফরিদ শেখের সময় ভাল যাচ্ছে না। গত বছর অনাবৃষ্টিতে ফসল ভাল হয়নি। এ বার অতিবৃষ্টিতে ফরিদ তাঁর জমিতে ধান বুনতেই পারেননি। ফরিদ একা নন, বর্ষায় জমা জলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন— নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এমন চাষির সংখ্যা নেহাত কম নয়।
কৃষি দফতরের পরামর্শ, চাষিদের এই ক্ষতি সামাল দিতে পারে ডাল আর তৈলবীজ। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টি কমলেও আমনের মরসুম শেষ। কার্তিক অগ্রহায়ণে রবি শস্য ও তার পরে বোরো মরসুম ছাড়া আর চাষের সুযোগ নেই। এই সময়ে জমি ফেলে না রেখে স্বল্প সময়ে ডাল বা তৈলবীজ চাষ করে আমনের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষিরা।
মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি আধিকারিক তাপস কুণ্ডু বলেন, “নিচু জমিতে আমন চাষ যারা করতে পারেননি, তাঁদের বিকল্প উপার্জনের পথ হিসাবে ডাল এবং তৈলবীজের চাষ অনেকটাই আর্থিক ক্ষতি সামলে দেবে।” নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা রঞ্জন রায় জানান, আমন করা যায়নি বলে যে সব জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে সেখানে কলাই বা সর্ষে চাষ করলে চাষির কিছুটা সুরাহা তো হবেই। বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন চাষও একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ। তাঁর কথায়, “প্রায় দু’মাস জমি ফেলে রাখার বদলে স্বল্পকালীন ডাল, সর্ষে ছাড়াও ধনে পাতা, পালং, লাল শাক চাষ করে খানিকটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন চাষিরা। এতে জমিতে প্রাকৃতিক ভাবে নাইট্রোজেনের জোগানও বৃদ্ধি পাবে। পরে বোরো মরসুমে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে না।”
এ বার বর্ষায় পাট ছাড়া বাকি সব মরসুমি ফসলই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে পাট চাষিরা খেতে জমা জলে পাট পচানো সেরে ফেলেছেন। কিন্তু জমিতে জল জমার কারণে অন্য বর্ষাকালীন আনাজ যেমন জমিতে পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, তেমনই বহু এলাকায় চাষিরা বর্ষার প্রধান ফসল আমন ধানের চাষ করতেই পারেননি।
সবথেকে সমস্যায় পড়েছেন সে সব চাষি যাঁদের জমি নিচু। জুলাই-অগস্ট জুড়ে বৃষ্টিতে কান্দি, ভরতপুর, হিজল, বড়ঞার মতো মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষি আমন চাষে হাত দিতে পারেননি। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমনের মরসুম শুরুর মুখে জেলা জুড়ে ভারী বর্ষণে বহু জমিতে জল জমে গিয়েছিল। পরে বৃষ্টি কমলেও নিচু জমি থেকে জল না নামায় ওই সমস্ত জমিতে আমনের চারা বসাতে পারেননি কৃষকেরা। সেই ক্ষতি সামাল দিতেই চাষিদের এমন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি দফতরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে এ বার আমন চাষ করা সম্ভব হয়নি। সেই সব জমিতে ডাল ও তৈলবীজ চাষের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের কথায়, জল সরে যাওয়া জমিতে সেপ্টেম্বর থেকেই ভাদু কলাই এবং টোরি সর্ষের চাষ করা যাবে। যে জমিতে জল জমে সেখানে খেসারি চাষ করতে পারবেন চাষিরা।
বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানাচ্ছেন, বেশ কিছু চাষি ডাল ও তৈলবীজ বুনতে শুরু করেছেন। ফরিদ শেখ কথায়, “কৃষি দফতরের কথা মতো জমিতে খেসারি বুনে দিলাম। যদি কিছুটা ক্ষতি পূরণ হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy