Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ক্ষতিপূরণের নামগন্ধ নেই, চাষিরা ফুঁসছেন

আমপানে বিপুল ক্ষতির সামনে পড়়ে এখন রাগে ফুঁসছেন জেলার চাষিদের একটা বড়় অংশ।

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক 
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০১:১৪
Share: Save:

বিঘের পর বিঘে কলাবাগান, পানবরজ শেষ। জলে ডুবেছে পাকা ধান। মাচা উড়ে-ভেঙে ধ্বংস হয়েছে পটল, উচ্ছের মতো আনাজ, পচে গিয়েছে আম, ফুল, তিলের মতো বহু জিনিস।

আমপানে বিপুল ক্ষতির সামনে পড়়ে এখন রাগে ফুঁসছেন জেলার চাষিদের একটা বড়় অংশ। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়়ের পর তিন দিন কাটতে চললেও ক্ষতিগ্রস্ত, সর্বহারা চাষিদের নিয়ে প্রশাসনের আদৌ কোনও ভ্রূক্ষেপ আছে কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কারণ, জেলার কোথাও চাষে ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য নেই!

জেলার কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী শনিবারও বলেছেন, ‘‘জেলায় কলা, পেঁপে, আনাজ ও ফুল চাষিদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে, রাজ্য সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেননি। করলেই তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য।’’

চাষিদের ক্ষোভের জায়গাটা এখানেই। তাঁদের প্রশ্ন, এত বড়় ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রাথমিক পর্বেই তো সাহায্যের সবচেয়ে দরকার। এই সময়েই চাষির দিশেহারা দশা হয়। আর এখনই দিনের পর দিন গড়়িয়ে যাচ্ছে শুধু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা সেই জল্পনায়?

শান্তিপুরের পাশাপাশি তেহট্টেও কলা চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেহট্টের কলা চাষি অনুপ মণ্ডল, অরিজিৎ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘আমাদের বয়ারবান্ধা গ্রামে বিঘের পর বিঘে জমির কলা গাছ ভেঙে গিয়েছে। দুর্যোগের তিন দিন পরেও সরকারি কোনও সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়নি। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা যেতে।’’

কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, মৌজা ধরে ধরে এখনও ক্ষতির হিসেব কষা হচ্ছে। বিপর্যয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রচুর বাগিচা ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। কল্যাণীর চর জাজিরার বাসিন্দা চাষি রবি মাহাতো বলছেন, ‘‘বাজার থেকে চড়া সুদে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে কলাচাষ করেছিলাম। সবই গাছ ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিপূরণ না পেলে কী করব জানি না। কেউ আমাদের কথা ভাবে না।’’

জেলার বহু চাষি পলি হাউসের মাধ্যমে ফুলের চাষ করেন। অসময়ের আনাজও ফলান। ঘূর্ণিঝড় আমপানের জেরে সে সব পলিহাউসের একাংশ ভেঙে গিয়েছে। নাকাশিপাড়ার এমনই এক চাষি আনন্দ বিশ্বাসের কথায়, ‘‘উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে এর মধ্যে অনেক বার কথা বলেছি। ওঁরা জানিয়েছেন, বাগিচা ফসলের উপরে কোনও সরকারি বিমা হয় না। ফলে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছে তার জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ না-পেলে পথে বসতে হবে। কিন্তু সরকারি তরফে অদ্ভুত ভাবে এখনও সব চুপচাপ।’’ এ ব্যাপারে জেলার উদ্যানপালন আধিকারিক সুরপতি মণ্ডল কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

জেলার কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, জেলার বহু চাষি কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে চাষ করেন। ঋণ দেওয়ার সময়েই ফসলের বিমা করিয়ে নেয় ব্যাঙ্কগুলি। ফলে ওই চাষিরা ঘূর্ণিঝড়ের ফলে হওয়া ক্ষতির টাকা পাবেন। জেলার বহু চাষিই বিনা পয়সায় বিমার আওতায় রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিমা সংস্থাকে ক্ষতির বিষয়ে জানালে তাঁরাও টাকা পাবেন। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, এই বিষয়টি চাষিদের মধ্যে কত জন জানেন? ৪৮ ঘণ্টা তো কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে তাঁদের এই তথ্য জানানোর কোনও চেষ্টা কি প্রশাসনের তরফে হয়েছে? জবাব মেলেনি।

বহু চাষির অভিযোগ, অনেক চাষি জমি লিজে নিয়ে, টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জমির মালিক সরকারি ক্ষতিপূরণ পান কিন্তু ভাগ চাষিরা বঞ্চিত হন। সরকারি ক্ষতিপূরণ না-এলে তাঁরা মারা পড়়বেন।

করিমপুরের চাষি বিশ্বনাথ বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘এর আগেও কয়েক বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত চাষির বদলে যাঁর কোনও ক্ষতি হয়নি তেমন লোকের কাছে টাকা গিয়েছে।’’

তেহট্টের বেতাই এলাকার পেঁপে চাষি গণপতি হীরা, রবিন ঘোষ, নারায়ণ বিশ্বাসদের আক্ষেপ, অতীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সরকার একাধিক বার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। কিন্তু পেঁপে চাষিরা ওই সব টাকা থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE