হাসপাতালে রোগীর লাইন। —নিজস্ব চিত্র।
জ্বরে থরথর জেলা !
মেঘ-রোদ্দুরের খামখেয়ালিপনা আর শীত-গরমের হেরফের— তারই জেরে জেলা জুড়ে জ্বরের থাবা।
হাসপাতালের সামনে লম্বা লাইন। কোলে-কাঁখে শিশুদের নিয়ে মায়েরা, কোথাও বা নূব্জ্য বয়স্কদের সঙ্গে জ্বরে ঘোরের বিড়বিড় করতে করতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সদ্য যুবা। জেলা সদর থেকে গ্রামীণ হাসপাতাল, চিকিৎসকেরা কপালের ঘাম মুছে বলছেন, ‘‘আউটডোরে জ্বর ছাড়া আর কোনও রোগই নেই!’’
এ অবশ্য নতুন কথা নয়। শীত শেষে ফাগুনে গ্রমের আঁচ পড়তেই এ প্রকোপ ফি বার ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে। তবে এ বার যেন তার ঘনঘটা কিঞ্চিৎ বেশি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মেঘ-রোদ্দুরই এ জন্য দায়ী।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি যখন শীত ফুরিয়েছে বলে গরম পোশাক উঠে গিয়েছে তাকে, তখনই নিম্নচাপের জেরে ফিরে এসেছিল বৃষ্টি আর তার হাত ধরেই ঠান্ডা। সে ঝঞ্ঝা কাটতে না কাটতেই রোদ্দুর এবং সপ্তাহ ঘোরার আগেই ফের বৃষ্টি। প্রকৃতির এই চঞ্চলতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরেই ঠান্ডা লেগে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপ।
কান্দি হাসপাতালে পা রাখতেই চোখে পড়েছে, সেই লম্বা লাইনটা। মায়েরা সকলেই বলছেন, বৃষ্টিতে ভেজার প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু ঠান্ডা লেগে ছেলে-মেয়েরা নাগাড়ে ভুগছে সেই থেকে। নাক দিয়ে জল, কাশি, হাঁচি আর মাথা ব্যাথার উপশম নিয়ে জেরবার বাড়ির লোক। শুধু বাচ্চা নয়, আবাল-বৃদ্ধ সকলেরই একই জ্বরে হাঁসফাঁস অবস্থা।
এক ধাক্কায় পারদ নেমে যাওয়ার জেরেই এমনই কাণ্ড বলছেন ডিউটিরত চিকিৎসক। তিনি মনে করছেন এর সঙ্গে পতঙ্গ বাহিত জ্বরের কোনও সম্পর্ক নেই।
কান্দি মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অভীক দাস, “এখন আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়, ওই সময় জ্বরে আক্রন্তের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’’ সামাল দিতে তাই বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। জ্বর হলেই যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, এমন কথা নেই। কিন্তু ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াটা জরুরি।
ছবিটা কমবেশি প্রায় একই রকম লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত এক সপ্তাহে জ্বর নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২ জন।
আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাও কিছু কম নয়। এক সপ্তাহে মোট ১৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতালের বর্হিবিভাগেও প্রতিদিনই জ্বর নিয়ে আসছেন রোগীরা। এই সপ্তাহের হিসেব বলছে জ্বরে আক্রান্ত অন্তত ১১৬ জনের চিকিৎসা হয়েছে।
শহরেও জ্বরের প্রকোপ কম নয়। অন্তত বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চত্বর সে কথা বলছে না। কারণ সেই এক, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭২ হাজার বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে শীত নয়, জ্বরে কাঁপছে নবাবের জেলা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy