Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোথাও ইটে রং, কিছু স্কুল হাত গুটিয়ে

দেওয়ালে প্লাস্টার নেই, কিন্তু রং করতেই হবে। সরকারি নির্দেশ ছিল, মঙ্গলবারের মধ্যেই কাজ মিটিয়ে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হবে। তবেই মিলবে টাকা। বাধ্য হয়েই হুড়মুড় করে শংসাপত্র জমা দেয় স্কুল। বহু স্কুলেই রং হয়নি, বা হয়েছে আধাখেঁচড়া।

দায়সারা। প্লাস্টার ছাড়াই এ ভাবে রঙের পোঁচ রড়েছে বহু স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

দায়সারা। প্লাস্টার ছাড়াই এ ভাবে রঙের পোঁচ রড়েছে বহু স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার ও অনল আবেদিন
কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

দেওয়ালে প্লাস্টার নেই, কিন্তু রং করতেই হবে। সরকারি নির্দেশ ছিল, মঙ্গলবারের মধ্যেই কাজ মিটিয়ে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হবে। তবেই মিলবে টাকা। বাধ্য হয়েই হুড়মুড় করে শংসাপত্র জমা দেয় স্কুল। বহু স্কুলেই রং হয়নি, বা হয়েছে আধাখেঁচড়া।

কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে দেওয়াল রং করাই হয়নি। সেটির প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত। প্রথমত আমাদের স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। তা ছাড়া, এত তাড়াহুড়ো করে করানো সম্ভব নয়।’’ দেওয়াল রং করেনি কৃষ্ণনগর এভি হাইস্কুলও। সেটির পরিচালন সমিতির সভাপতি রাজ্যের দফতরহীন মন্ত্রী অবনীমোহন জোয়ারদার। তিনি বলেন, ‘‘এত তাড়া করার কিছু হয়নি। পরে ধীরে-সুস্থে রং করব।’’ দেওয়ালে পোঁচ পড়েনি শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল বা বেথুয়াডহরি জেসিএম হাইস্কুলেও। প্রথমটির প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকের ব্যস্ততা তো ছিলই। তা ছাড়া, স্কুলের দেওয়াল সংস্কার না করে রং করলে তা থাকতও না। তাই আমরা এ ভাবে রং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” দ্বিতীয়টির পরিচালন সমিতি সভাপতি অংশুমান দে-ও কার্যত একই কথা বলেছেন।

লালগোলার বালুটুঙি জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক নাজমুল হকের আক্ষেপ, ‘‘দেওয়ালে প্লাস্টার না থাকায় রং করা যাবে না বলে লালগোলা দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)-কে জানানো হয়। তিনি বলেন, প্লাস্টার না থাকা দেওয়ালেও রং করতে হবে।’’ অথচ অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি ওই স্কুলবাড়িটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই রয়েছে।

৩৪ নম্বর লালগোলা হরিজন প্রাথমিক স্কুলের দোতলা বাড়িতেও ইটের উপরে রং চাপানো হয়েছে। যদিও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস মণ্ডল এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। লালগোলা দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দীপঙ্কর রায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনেই প্লাস্টার থাকা ও না থাকা সব স্কুলবাড়ির দেওয়াল রং করতে বলা হয়েছে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলার অনেক জায়গাতেই একই কাণ্ড ঘটেছে বলে খবর।

নদিয়ায় কিছু স্কুল দেওয়াল রং না করালেও সকলে অবশ্যই ততটা সাহসী হতে পারেনি। অনেক স্কুলেই দেওয়াল না ঘষে তড়িঘড়ি কোনও মতে রং চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার প্লাস্টার খসে যাওয়া জরাজীর্ণ দেওয়ালেও রং করা হয়েছে। এক সঙ্গে এতগুলো স্কুলবাড়িতে বাইরের দেওয়াল রঙের কাজ শুরু হওয়ায় ভাল মিস্ত্রিও পাননি সকলে। বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রিদের দিয়ে রং চাপানো হয়েছে। সুযোগে বুঝে তাঁরা পারিশ্রমিকও নিয়েছেন বেশি।

অনেকের মতেই, এ ভাবে লক্ষ-লক্ষ টাকা জলে গিয়েছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও খবর নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Murshidabad Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE