Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
ওয়ার্ডে বিড়ি ধরিয়েছিলেন রোগী

নেশার আগুন থেকে আতঙ্ক মেডিক্যালে

আদ্যন্ত এক গ্রামীণ বিড়ি পিয়াসী মানুষের ঘোর নেশার জেরেই মঙ্গলবার বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের অগ্নিকাণ্ডের নাটকটি অনুষ্ঠিত হল!

হাসপাতালে দমকল কর্মীদের তৎপরতা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে দমকল কর্মীদের তৎপরতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

দেশলাই না হোক, ‘বিড়ি কাহিনি’ বলাই যায়!

আদ্যন্ত এক গ্রামীণ বিড়ি পিয়াসী মানুষের ঘোর নেশার জেরেই মঙ্গলবার বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের অগ্নিকাণ্ডের নাটকটি অনুষ্ঠিত হল!

যার হাত ধরেই এক এক করে ফিরে এল, দু’বছর আগে ওই হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের সেই সকাল, দু-দু’জনের মৃত্যু আর নিরাপত্তার ফস্কা গেরোর স্মৃতিগুলো।

শ্বাসকষ্টের জেরে হাসপাতালে তাঁর অক্সিজেন চলছিল। কাছে থাকলেও পাঁচ দিন ধরে বিড়ির স্বাদ পাননি তিনি। পরিজনেরা আসতেই তাই চেয়ে নিয়েছিলেন দেশলাই। আর ভিজিটিং আওয়ার্সে তাঁদের সামনেই ধরিয়ে বসেছিলেন বিড়ি।

আগুন-আতঙ্ক: সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীদের। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

নাকে তাঁর অক্সিজেনের নল, সেই অবস্থায় বিড়ি ধরাতে গিয়েই ঘটল বিপত্তিটা। ধোঁয়া আগুনের ঝলক, বিড়ির গন্ধ— সব মিলেমিশে ওয়ার্ড জুড়ে ছড়ালো আতঙ্ক। হাসপাতাল জুড়ে পড়ে গেল হুড়োহুড়ি। ওয়ার্ড খালি করে ধুঁকতে থাকা রোগীও পালানোর পথ খুঁজলেন। সে এক পড়ি কি মরি অবস্থা!

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে তাঁর নাম, মধুসূদন ঘোষ। কান্দির গোকর্ণের বাসিন্দা। এ দিন স্ত্রীর সামনেই বিড়ি টানতে গেলেই দপ করে জ্বলে ওঠে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। তাঁর স্ত্রী-ই প্রথমে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। রোগীদের কেউ কেউ বলছেন, ওই সময় অক্সিজেনের পাইপ লাইনের দু’টি জায়গায় ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। আতঙ্কটা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো।

হাসপাতালের কর্মীরা আগুন লাগার খবর পেয়ে ওয়ার্ডে অক্সিজেনের পাইপ লাইনে ফায়ার এক্সটিংগুইসার নিয়ে ছুটতে শুরু করেন। নিমেষে খবর ছোটে দমকলে। দু’টি ইঞ্জিন হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসে। ঘটনার জেরে আতঙ্কিত কিছু রোগী হুড়োহুড়ি করে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পড়েন। আবার কিছু রোগীকে হাসপাতালের নিরাপদ জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি যে তত ভয়ঙ্কর নয়, বুঝতে ঘণ্টাখানেক সময় চলে যায়।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘ওই রোগী ভীষণ বেআইনি কাজ করেছেন। তবে, পরিস্থিতি পেকে ওঠার আগেই সামাল দেওয়া গেছে।’’

হাসপাতাল ধূমপান বর্জিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এক জন রোগী কি করে বিড়ি ধরালেন, ওয়ার্ডের ভেতরের নার্স বা অন্য কর্মীদের নজরেই বা তা পড়ল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘এত অসচেতনতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না আসাই ভাল। ওই রোগীর জন্য ফের মৃত্যু-কাণ্ড ঘটতে চলেছিল।’’

হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘রোগীরা জামাকাপড়ের লুকিয়ে অনেক সময়ে বিড়ি নিয়ে আসেন। এত প্রচার, এত কিছুর পরেও এটা কাম্য ছিল না। তবে, এর পরে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’

দিন কুড়ি আগে মধুসূদন ঘোষ বাড়িতে শৌচাগারের ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল। সম্প্রতি শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তাঁর অকপট দাবি, ‘‘ভর্তির দিন থেকেই আমার কাছে পাঁচটি বিড়ি ছিল। আগুন না থাকায় বিড়ি ধরাতে পারিনি। এ দিন আর পারছিলাম না। সুযোগ বুঝে ধরিয়েছিলাম। হাসপাতালের ভেতরে যে বিড়ি খাওয়া নিষেধ এটা আমার জানা ছিল না।’’ ঘটনার পর অবশ্য মধুসুদনের পরিবার হাসপাতাল চত্বর থেকে বেপাত্তা হয়ে যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Murshidabad Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE