Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোট অঙ্কেই কি শব্দে ছাড়?

রবীন্দ্র সরোবরে যেমন নিয়মনিষেধের তোয়াক্কা না-করে তালা ভেঙে জলদূষণ ও শব্দবাজি চলেছে তেমনই নদিয়ার দুই শহরের একাধিক ঘাটে চার দিক কাঁপিয়ে বেজেছে ডিজে বক্স, ফেটেছে চকলেট বোমা, কালিপটকা। বাজি ফেটেছে কল্যাণীতেও।

ছটে ফাটল বাজি। শনিবার কৃষ্ণনগরে জলঙ্গির পাড়ে। নিজস্ব চিত্র

ছটে ফাটল বাজি। শনিবার কৃষ্ণনগরে জলঙ্গির পাড়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৪
Share: Save:

ছট পুজোয় পরিবেশবিধি ভাঙার ব্যাপারে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের থেকে খুব একটা পিছিয়ে থাকেনি রানাঘাটে চূর্ণী বা কৃষ্ণনগরের জলঙ্গি নদীর বিভিন্ন ঘাট। রবীন্দ্র সরোবরে যেমন নিয়মনিষেধের তোয়াক্কা না-করে তালা ভেঙে জলদূষণ ও শব্দবাজি চলেছে তেমনই নদিয়ার দুই শহরের একাধিক ঘাটে চার দিক কাঁপিয়ে বেজেছে ডিজে বক্স, ফেটেছে চকলেট বোমা, কালিপটকা। বাজি ফেটেছে কল্যাণীতেও।

অথচ পুলিশ-প্রশাসন এ বার অনেক আগে থেকে শব্দবাজি রোখার পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিল, সেইমতো প্রচারও হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, কালীপুজোয় শব্দবাজি রুখতে পুলিশের অত্যন্ত সন্তোষজনক ভূমিকার পর ছটপুজোয় শব্দ বিলকুল রুখে দেবে তারা। কিন্তু বিষয়টা উল্টো হয়েছে। কালীপুজোর সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি পুলিশ।

পরিবেশকর্মী এবং নাগরিকদের একাংশের মতে অবশ্য প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা সাফল্য ধরে রাখতেও চাননি। কারণ, রাজনৈতিক মহলের চাপ। ছটপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে হিন্দি ভোটব্যাঙ্কের তাস। প্রধান বিরোধী বিজেপি হোক বা শাসক দল তৃণমূল—কেউই ছটে দূষণের অভিযোগ তুলে এই ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া করতে চায় না। রানাঘাটের এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘পুলিশের সামনে শোভাযাত্রায় আর ঘাটে দেদার নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটল, কান ফাটিয়ে ডিজে বাজল, একাধিক লো‌ক থানায় ফোন করে অভিযোগও করলেন। পুলিশ চাইলে কি আটকাতে পারত না? আসলে ওরা আটকাতে চায়নি।’’

তবে কান ঝালাপালা করা ডিজে বা বাজির কথা মানছে না পুলিশ। তাদের দাবি, অল্পআধটু শব্দ হলেও মোটের উপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। রানাঘাট জেলা পুলিশ সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, “ছট পুজো শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। দু-একটি জায়গায় ডিজে বেজেছিল, খবর আসা মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে তেমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি।” দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ বল ঠেলে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কোর্টে। দাবি করেছেন, মানুষ সচেতন হননি বলে ছটে শব্দবাজি বা ডিজে পুরোপুরি রোখা যায়নি। আবার অন্য অংশের মত, একবারে সব বন্ধ করা যায় না। সময় লাগবে।

নদিয়া দক্ষিণ জেলা বিজেপি সভাপতি মানবেন্দ্র রায় যেমন বলেন, “মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির কিছু দায়িত্ব থাকে। আমরা সেটা পালন করার চেষ্টা করছি।” রানাঘাট শহর তৃণমূলের কার্যকরি সভাপতি পিন্টু সরকারের কথাতেও, “ডিজে বন্ধ হওয়া দরকার। মানুষের সচেতনতার অভাবে বন্ধ করা যায়নি। যাঁরা এ সব করছেন তাঁদের সচেতন করতে হবে। আমরা সেই কাজ শুরু করেছি।” কৃষ্ণনগরের জেলা পুলিশ সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই-এর বক্তব্য, “আমরা সব রকম চেষ্টা করেছি। তার ভিতরেও যদি কোথাও শব্দ বাজি ফাটানো হয়ে থাকে সেগুলো চিহ্নিত করছি। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”

বিজেপি উত্তর জেলার সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, “আমরা পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে। তীব্র ভাষায় এর নিন্দা করছি। তৃণমূলের প্রশয়ে ও সব হয়েছে।” আবার কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা-র মন্তব্য, “ডিজে বেজেছে বলে কোনও খবর নেই। শব্দবাজি ফেটেছে, তবে গত বারের তুলনায় কম। একবারে জোর করে কিছু হয় না। ধীরে ধীরে কমছে। সামনের বার বন্ধ হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Puja Environment Pollution Sound Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE