Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

চলছে অবৈধ কারবার, বিস্ফোরণেও হয়নি শিক্ষা

গাংনাপুরের মানুষই জানিয়েছেন, বাজির কারখানাগুলি থেকে মশলা কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে বহু মানুষ চকলেট বোমা বানিয়ে ফাটান। আবার অনেক বাজিকর্মী বস্তাবন্দি চকলেট বোমা বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাতে রংচঙে কাগজ জড়িয়ে ভিতরে শলতে ভরে আবার কারখানায় পৌঁছে দেন। এই ভাবেই বছরের পর বছর নিষিদ্ধ শব্দবাজির বাজার ফুলেফেঁপে উঠেছে গাংনাপুরে।

উদ্ধার হওয়া বাজি। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া বাজি। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৯
Share: Save:

তিন বছর আগের ঘটনা। ২০১৫ সালের ঘটনা। রানাঘাট-বনগাঁ শাখায় গাংনাপুর রেল স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ধারের কলোনিতে বাড়িতে বসে চকলেট বোমায় কাগজ জড়িয়ে সলতে ভরছিল বাড়ির মহিলারা। সেই সময় লম্ফ থেকে আগুন লাগে চকলেটের গাদায়। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এক শিশু-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পরেও চকলেট তৈরি চলছে। মহিলা ও শিশুরা বাড়ি বসে তাতে কাগজ জড়াচ্ছেন, সলতে ভরছেন কোনও বিস্ফোরণ বা অগ্নি প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই। আবার একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল গত রবিবার। টনক বোধহয় এখনও নড়েনি।

একটা কাগজের ছোট বাক্স। তার মধ্যে বারুদ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেই বারুদ গরম হলে আরও ভাল। এই অবস্থায় সুতোর সঙ্গে আঠা মিশিয়ে বাক্সগুলোকে শক্ত করে জড়ানো হয়। তার পর রোদ্দুরে শুকোতে দেওয়া হয়। ভাল করে শুকোলে মুড়ে দেওয়া হয় রংবেরংয়ের কাগজে। তার মধ্যে একটি সলতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই আলোর বাজির পাশাপাশি দেদার শব্দ বাজি তৈরি হয় গাংনাপুরে।

এলাকাতেই খুল্লমখুল্লা খোলাবাজারে বা বাজি কারখানার ভিতর থেকে তা বিক্রি হয় কিম্বা গাড়ি বোঝাই করে ভিন জেলা, ভিন রাজ্যে যায়। বাইরে থেকে গাড়ির ডিকি ভরে শব্জবাজির মশলা নিয়মিত ঢোকে এলাকায়। গাংনাপুর হাইস্কুলের সামনে রাস্তার দু’ধারে বাজির দোকানগুলিতে থরে থরে তুবড়ি, চরকি সাজিয়ে রাখা। সেখানে গিয়ে দোকানের মালিক অথবা কর্মচারীদের কানে শুধু বলে দিতে হয় ‘চকলেট লাগবে।’ ব্যস, প্যাকেট ভর্তি চকলেট বোমা হাজির। দাম শুধু একটু বেশি দিতে হয়।

এলাকার লোকেরাই জানালেন, পুলিশ সব জানে, ভিতরে-ভিতরে দু’পক্ষের যোগসাজশ রয়েছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আগুন মোকাবিলার ব্যবস্থা ঠিক রয়েছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব দমকল বিভাগের, লাইসেন্স রয়েছে কিনা তা দেখবে প্রশাসন আর বেআইনি মজুত দেখবে পুলিশ। গাংনাপুরের কারখানাগুলিতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি হচ্ছে বলে খবর এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ তখন প্রশ্ন করা হয়, খবর আসার জন্য পুলিশ কেন অপেক্ষা করবে? কেন নিয়মিত এলাকার নজরদারি চলবে না? সেটা চললে তো প্রতিটি কারখানার ভিতরে এত শব্দবাজি পাওয়া যায় না। এর কোনও যুতসই উত্তর পুলিশ সুপার দিতে পারেননি।

গাংনাপুরের মানুষই জানিয়েছেন, বাজির কারখানাগুলি থেকে মশলা কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে বহু মানুষ চকলেট বোমা বানিয়ে ফাটান। আবার অনেক বাজিকর্মী বস্তাবন্দি চকলেট বোমা বাড়ি নিয়ে গিয়ে তাতে রংচঙে কাগজ জড়িয়ে ভিতরে শলতে ভরে আবার কারখানায় পৌঁছে দেন। এই ভাবেই বছরের পর বছর নিষিদ্ধ শব্দবাজির বাজার ফুলেফেঁপে উঠেছে গাংনাপুরে। অভিযোগ, পুলিশ ও প্রশাসন দেখেও দেখে না। গাংনাপুরের বাজি কারখানাগুলোতে সোমবার হানা দিয়ে কয়েক বস্তা চকলেট বোম পাওয়া গিয়েছে। বেআইনি শব্দবাজি তৈরি ও মজুতের অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার দীপনারায়ণ রায় ও কৃষ্ণ মাজি নামে দুই বাজি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের আজ আদালতে তোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firecrackers Gangnapur Blast Illegal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE