মাছের দেখা নেই।সঙগে দোসর হয়েছে কাপড়া জাল। সরু নাইলনের সেই জালে চারা মাছইনয়, উঠে আসছে নদীতে ছাড়া মাছের ডিমের চাকও। ফলে পুজোর মুখে মাছের আকালের আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ পড়েছে বাজারের।
বিএসএফের রাঙা চোখ, বাংলাদেশি ধীবরদের দাপট এড়িয়ে সীমান্তের মৎস্যজীবীরা যেটুকু মাছ নৌকায় তুলছিলেন, কাপড়া জাল নিয়ে এক শ্রেণিক ধীবরের মাছের খোঁজ সেই আকালে আঁধার ছড়িয়ে আরও। মাছ না পেয়ে জাল গুটিয়ে তাই অন্য পেশায় মুখ গুঁজছেন অনেকেই। অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে।
তাঁদের দাবি, নতুন করে মাছের খোঁজে নামা এই কাপড়া জাল নিয়ে নদীতে ভাসা মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার পেশায় যেন শেষ পেরেক পুঁতে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনেরও কোনও হেলদোল নেই বলেই অভিযোগ পুরনো মৎস্যজীবীদের।
জলঙ্গি এবং রানিনগর পদ্মা লাগোয়া এলাকায় এই অপেশাদার মৎসজীবীদের কাপড়া জালের (মশারি দিয়ে তৈরী জাল) অত্যাচারে মৎসকুল বিপদের মুখে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও মৎস বিষেশজ্ঞরাও। মাছ-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘কাপড়া জাল আসলে মশারি দিয়ে তৈরি সুক্ষ্ম জাল। ওই জাল নদিতে নামালে মাছ কেন, মাছের ডিমও নষ্ট হয়ে যায়। এতে জেমন মাছের বংশবৃদ্ধি লোপ পায়, তেমনি ভাবে মৎসজীবীদের ভবিষ্যৎও নষ্ট হয়।’’
এখনও সীমান্তের গঞ্জগুলিতে গেলেই দেখা মিলবে ছোট ইলিশের পাশাপাশি ছোট মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছে ব্যাবসায়ীরা। যেগুলি ধরা আইনত দণ্ডনীয়। রানিনগরের লালকুপ এলাকার এক মাছ ব্যাবসায়ী বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘‘মৎসজীবীরা ছোট মাছ নিয় এলে আমরা প্রতিবাদ করি। আর সেটা করলে উল্ট আমাদের ধমক দেয়। বলে তোমার কাজ মাছ কেনা তুমি মাছ কেন! কোনটা ধরব, আর কোনটা ছাড়ব সেটা আমাদের ঠিক
করতে দাও।’’
মৎস দফতরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রানিনগর ও জলঙ্গি ব্লকে এই কারবার চলচেও ওই দফতরের কর্তাদের হেলদোল নেই। জেলা মৎস দফতরের কর্তারা বলছেন, ওই জাল দিয়ে মাছ ধরা অপরাধ। এটা চলতে থাকলে এক দিকে যেমন মৎসজীবীরা মার খাবে। অন্যদিকে ভালো মাছ থেকেও বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে আলচনা শিবিরও করার পরিকল্পনাও নিয়েছে তারা।
জলঙ্গির কাজিপাড়ার গুড়িপাড়া এলাকায় বাস ৫০০ মৎসজীবী পরিবারেরের। সেখানকার জিতেন মণ্ডল বংশ পরমপরায় মৎসজীবী। তার কথায়, ‘‘বাপ-ঠাকুরদার হাত ধরে মাছ ধরা শিখেছি নদীতে। তারা আমাদের শেখাতেন কোন মাছটা ধরতে হয় আর কোনটা ছাড়তে। এমনকি বড় মাছের পেটে ডিম থাকলেও অনেক সময় ঠাকুরদা বলতেন ওগুলো ছেড়ে দিতে।’’
কাপড়া জাল এসে সে নিয়মটুকুও কেড়ে নিয়েছে নিঃশব্দে। এলাকার মৎসজীবী সমব্যায় সমিতির সম্পাদক জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘ এলাকার কয়েকজন মৎসজীবী দলবেধে এই কাজটি করছে। ফলে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস দেখায়নি। বিষয়টি নিয়ে রানিনগর ব্লকের মৎস দফতরে অনেকবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।’’ প্রবীণ মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, একটা সময় সকলেই মনে করতেন, নদী বাঁচলেই বাঁচবে মৎস্যজীবীরা। এখন তো নদীও মেরে ফেলা হচ্ছে। নির্বিচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা কিসিমের জাল। সব কেমন বদলে গেল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy