টোটো চলাচল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে।
অনুরোধ করেছিলেন খোদ ওসি। বুধবার স্বামী অখণ্ডানন্দ বালিকা বিদ্যামন্দিরে এসেছিলেন বেলডাঙার ওসি সমিত তালুকদার। স্কুলের ছাত্রীদের তিনি অনুরোধ করেন, তারা যেন টোটোতে স্কুলে না আসে। কারণ, স্কুলটি একেবারে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে। তার ঠিক এক দিন পরে ওই স্কুলেরই দু’জন ছাত্রী টোটো দুর্ঘটনার পরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে।
শুক্রবার বেলডাঙার বিনকার, সারগাছি ও ডিহিপাড়া গ্রাম থেকে পাঁচ ছাত্রী একটি টোটোয় স্কুলে আসছিল। টোটোতে ভাবতা নেতাজি হাইস্কুলেরও তিন ছাত্রী ছিল। উল্টো দিক থেকে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে টোটোর ধাক্কা লাগে। টোটোটি উল্টে যায়। স্থানীয় লোকজন খবর দেন পুলিশকে। জখম ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্বামী অখণ্ডানন্দ বালিকা বিদ্যামন্দিরের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি মণ্ডল ও অষ্টম শ্রেণির করবী মণ্ডলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনের মাথার আঘাত গুরুতর। বাকি তিন ছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পাঁচ ছাত্রী সারগাছি মোড় থেকে টোটো ধরে। প্রথমে মহুলা মোড় ও পরে ভাবতা যাওয়ার কথা। রাস্তার মধ্যে গোপীনাথপুর এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর যখন টোটোটি যাচ্ছিল তখন উল্টো দিক থেকে আসা একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। গাড়িটি উল্টে যায়।
প্রশাসনের নির্দেশে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টোটো চালানো নিষিদ্ধ। তার পরেও ছাত্রীরা টোটোতে স্কুলে আসছিল কেন? স্বামী অখণ্ডানন্দ বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা সুদেষ্ণা সিংহ বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে টোটো যে নিষিদ্ধ সেটা ছাত্রীদের বহু বার বলা হয়েছে। গত বুধবার পুলিশ আধিকারিকেরা এসে স্কুলে সভা করে সকল ছাত্রীকে বুঝিয়ে গিয়েছে। তখনও তাদের বলা হয়েছে, তারা যেন টোটোতে যেন স্কুলে না আসে। জাতীয় সড়কে যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। আমাদের দু’জন ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’’
অন্য তিন ছাত্রীর স্কুল ভাবতা নেতাজি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের ছাত্রীরা সারগাছি ও ডিহিপাড়া থেকে টোটোয় স্কুলে আসছিল। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তাদের জখম সম্ভবত কম। আমি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদেরদেখতেও গিয়েছিলাম।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। সেই কারণেই একটা দিক বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে ছোট গাড়িটি ঢুকে টোটোকে ধাক্কা দেয়। আচমকা বিকট শব্দে রাস্তার আশপাশের লোকজন চমকে ওঠেন। গাড়িটি ধাক্কা দিয়েই বহরমপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পুলিশ এলাকায় এসে দু’টো গাড়ির নম্বর নিয়ে গিয়েছে।
বৃষ্টির বাবা প্রশান্ত মণ্ডল কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ফোনে কোনও রকমে তিনি বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সে মেয়েকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছি। বুঝতে পারছি না কী হবে।’’ করবীর বাবা নিখিল মণ্ডল শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যেরা করবীর সঙ্গে আছেন। বেলডাঙার ওসি সমিত তালুকদার বলেন, ‘‘এ দিন মোড়ের মাথায় উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনা বলেই প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’
তিনি জানাচ্ছেন, টোটোকে জাতীয় সড়কে উঠতে দেখলেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তার পরেও কিছু টোটো স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করছিল। সেই কারণে স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের সতর্ক করা হচ্ছে। গত বুধবারেই মহুলার ওই স্কুলে তিনি গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্রীরা আমার কথা শুনলে এই বিপদ এড়ানো যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy