খাবার ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা প্লেটের টুকরো। ঝাঁটা দিয়ে জড়ো করতে করতে আপন মনেই গজগজ করছিলেন সুবর্ণপ্রভা, ‘‘এক রামে রক্ষে নেই দোসর সুগ্রীব। কোথায় কোন মুলুকে খেলা হচ্ছে আর শ্বশুর-জামাই তা নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাধিয়ে ফেলেছে। কত দিন পরে ছেলেটা এসেছে। তার সঙ্গে কোথায় দু’দণ্ড সংসারের কথাবার্তা বলবে! তা নয়, এসে থেকে শুধু ফুটবল আর মাসি-পিসি নিয়ে লড়াই।”
সদ্য কেনা প্লেট ভেঙে যাওয়ায় মা বেজায় চটেছেন দেখে শান্ত করতে মাঠে নামেন মেয়ে। তিনি ধরিয়ে দেন, ‘‘মাসি নয় মা, মেসি। বিখ্যাত ফুটবলার।” ষাটের কোঠায় পা দেওয়া নবদ্বীপের সুবর্ণপ্রভা চৌধুরী মেয়েকে ধমকে উঠলেন, ‘‘থাক, থাক। আমাকে ও সব শেখাতে
এসো না।”
বিশ্বকাপ আর জামাইষষ্ঠী। এমন মণিকাঞ্চন যোগ বড় একটা দেখা যায় না। ফুটবল এবং ষষ্ঠীর শ্বশুরবাড়ি বাঙালির দুই-ই বড় প্রিয়। ফলে ষষ্ঠীতে এ বার জামাইদের সঙ্গেই শ্বশুরবাড়ি গিয়েছেন মেসি, নেমার, রোনাল্ডো। সমস্যা সেখানেই। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বাঙালি বিশ্বকাপ এলেই ভাগ হয়ে যায় আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে। সুবর্ণপ্রভা যেমন স্বামীকে পইপই করে বুঝিয়েছিলেন, ‘‘দোহাই, ফুটবল নিয়ে ষষ্ঠীর ক’টা দিন জামাইয়ের সঙ্গে গোলমাল কোরো না।” কিন্তু সে কথা আর কে শুনছে!
জলঙ্গির নরসিংহপুরের অনুপ মণ্ডল নিজে এক জন ভাল গোল কিপার। জ্ঞান হওয়া ইস্তক দল হিসাবে আর্জেন্টিনার সমর্থক। তবে পছন্দের খেলোয়ার মেসি। অথচ প্রাক্তন ফুটবলার, শ্বশুরমশাই প্রদ্যুৎ দাস মনে করেন, ফুটবলটা এক মাত্র ব্রাজিলই খেলতে জানে। বাকিরা কিস্যু নয়। এহেন পরিস্থিতিতে কল্যাণীর শ্বশুরবাড়িতে ষষ্ঠী করতে গিয়ে প্রায়ই ফাউল হয়ে যাচ্ছে। মেসি পেনাল্টি মিস করার পর কার্যত অল আউট অ্যাটাকে যাচ্ছিলেন শ্বশুরমশাই। তবে রবিবার রাতে ব্রাজিল ড্র করার পর আক্রমণে ঝড় তুলেছেন জামাই।
বহরমপুরের আইনজীবী শুভায়ন সেনগুপ্তের শ্বশুরমশাই নেই। তা বলে জামাই আদরের কমতি নেই। সেখানে আর্জেন্টাইন উকিলবাবুর প্রতিপক্ষে ব্রাজিলিয়ন ভাইরাভাই শুভানু গুপ্ত। শুভায়ন বলেন, “ আমরা দু’জনেই ফুটবল পাগল। কোনও সময়েই ফুটবল নিয়ে কেউ কাউকে ছাড়নেওয়ালা নই।”
হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল আর্জেন্টিনার ভক্ত। তাঁর শ্বশুরমশাই সুকুমার ভাদুড়ি আবার ব্রাজিল এবং নেমার ছাড়া কাউকেই ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। এ নিয়ে বহু দিনের ঠাণ্ডা লড়াই রয়েছে জামাইয়ের সঙ্গে। বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলের আসর বসলেই তরজাটা শুরু হয়ে যায়। তবে এ বারে অবশ্য গরম এবং ছুটির অভাবে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হচ্ছে না পূর্ণেন্দুবাবুর। সুতরাং যুদ্ধটা আপাতত তোলা থাকল।
বিশ্বকাপ শেষ হতে এখনও যে ঢের বাকি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy