হাওয়ায় পুজো-পুজো গন্ধ। মাঠে ঝলমলে ফুটবল। তামাম তল্লাটে উৎসাহের জোয়ার। কী হবে, কী হবে! টিম নিয়ে কর্তাদের বুক দুরুদুরু।
হবে না? আজ যে ডোমকলে ‘মিনি আইএসএল’। আট দলের নকআউট। মাঠ জুড়ে বিদেশি ফুটবলারের ছুটোছুটি। মাঠের ধারে চিয়ারলিডারেরা! সকাল থেকে যুদ্ধু শুরু, রাতের মধ্যেই ফয়সালা।
কোনও খামতি যেন না থাকে তার জন্য অস্থায়ী টাওয়ার বসিয়ে তিন দিন ধরে চলছে রাতে আলো জ্বালানোর প্রস্ততি। কলকাতা থেকে চিয়ারলিডার তো আনা হচ্ছেই, মাঠে বসেছে জায়ান্ট স্ক্রিন। আয়োজকদের দাবি, শুক্রবার মঞ্চে হাজির থাকবেন সুব্রত ভট্টাচার্য, রহিম নবি ও দীপেন্দু বিশ্বাসের মতো তারকারা। আসছেন কলকাতা ময়দানের জিতেন মুর্মু, শিবশঙ্কর সরকার, সন্দীপ দাস, সাব্বির আহমেদ, চেন্নাই এফসি-র হয়ে আইএসএল খেলা প্রসেনজিৎ, ওএনজিসি-র হয়ে আইলিগ খেলে আসা আবু বাক্কারেরা।
আট দলের পিছনেই বড় বড় সব মাথা। অরঙ্গাবাদ টাউন ফুটবল দলের পৃষ্ঠপোষক শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। ডোমকল পুরসভার দলের হোতা পুরপ্রধান সৌমিক হোসেন। লালবাগ ও বহরমপুর পুরসভার দলের দায়িত্ব যথাক্রমে পুরপ্রধান বিপ্লব চক্রবর্তীও নীলরতন আঢ্যের হাতে। বড় ঠিকাদার খোকন শর্মা আর ইন্দ্রজিৎ ধর গড়েছেন ‘কাকার দল’। ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির দলের কর্ত্রী সভাপতি রেখা বিবি। ডোমকল পুলিশের দল চালাচ্ছেন এসডিপিও (ডোমকল) মাকসুদ হাসান। আলাদা দল আছে ইসলামপুর থানারও, সেটির মাথায় ওসি অঞ্জন বর্মন।
দল গড়া থেকে গোটা আয়োজনে জলের মতো খরচ হয়েছে টাকা। চ্যাম্পিয়ন দলকে নগদ ৬০ হাজার ও রানার্সকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। সেরা খেলোয়াড়, সেরা গোলরক্ষক, সর্বোচ্চ গোলদাতারও আলাদা পুরস্কার আছে। টিকিটের বালাই নেই, তাগড়া স্পনসর নেই, টিভি সত্ত্ব বিক্রি নেই। টাকা আসছে কোথা থেকে? কর্তাদের দাবি, সবই হয়েছে চাঁদা তুলে। যদিও ঘোড়াতেও তা বিশ্বাস করছে না, তবে তা নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথাও নেই। বরং সকলে ফুটছে মাঠের লড়াই নিয়ে।
তুমুল টেনশনে কর্তারাও। এক দিকে বহরমপুর ও লালবাগ পুরসভার প্রেস্টিজের লডডাই। নতুন পুরসভার কাছে হারলে বহরমপুরের নাক কাটা যাবে। পুরভোটের পরে ফের যেন যুদ্ধে নামছে ডোমকলও। পঞ্চায়েত সমিতি আর পুলিশই বা কম যায় কীসে? ইসলামপুর থানার দলে আট জন বিদেশি খেলোয়াড়। এসডিপিও-র দলে তারকা নেই। তাঁর বাজি সিভিক ভল্যান্টিয়ারেরা। বলেন, ‘‘খুব ভাল কিছু খেলোয়াড় আমাদের মধ্যে আছে, জান লড়িয়ে দেবে।’’ তৃণমূলের দুই মাতব্বর জাকির আর সৌমিকের মধ্যেও অদৃশ্য টক্কর।
কেন এই ‘মিনি আইএসএল’?
সৌমিকের ব্যাখ্যা, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পদধ্বনি স্পষ্ট শোনা যায় নিছক খেলার আড়ালে।
হিসেব-নিকেশ যা-ই থাক, মাঠ জুড়ে মাতামাতি, গো-ও-ও-ল..., রেফারির হুইসল, বেহুদা শিস, তালি গালি গলাগলি, জার্সির ওড়াউড়ি...
সে-ই বা কম কী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy