অলঙ্করণ তিয়াশা দাস।
টাকা দিয়ে ফর্ম ভরলেই মিলছে ভাল চাকরি! তা-ও আবার দু’তিন দিনের মধ্যে। সম্প্রতি এমনই জালিয়াতি চলছে শহরে।
দিন কয়েক আগে কল্যাণীর এক তরুণের মোবাইলে রাতের দিকে একটি মেসেজ আসে। সেখানে লেখা, বেসরকারি নামী-দামি ব্যাঙ্কে চাকরি দেওয়া হয়। নীচে লেখা একটি ফোন নম্বর। তরুণটির অভিযোগ, ওই নম্বরে ফোন করতেই ও পার থেকে বলা হয়, ‘‘আমি সোমনাথ বলছি। আপনি যদি চাকরি করতে চান, পাসপোর্ট সাইজের বেশ কয়েক কপি ছবি আর বায়োডেটা নিয়ে আমাদের অফিসে আসতে হবে। এর জন্য ২০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হবে। একটি নামী ব্যাঙ্কের মানবসম্পদ দফতরের এক আধিকারিক আসবেন ইন্টারভিউ নিতে। সে দিন ৩৭০০ টাকা জমা দিতে হবে।’’ সেই মতো তরুণটি ওই অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করান। পরে ৩৭০০ টাকাও জমা দেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি চাকরি পাননি।
শনিবার রানাঘাটে মিশন গেটের বিনপাড়ায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনও সাইনবোর্ড নেই। একটি দোতলা বাড়ির নীচে চলছে অফিস। বারান্দায় কয়েক জন ষন্ডা-মার্কা লোক ঘোরাঘুরি করছে। যেতেই তারা প্রশ্ন করল, ‘‘আপনি কি চাকরি খুঁজছেন?’’ ইতিবাচক উত্তর শুনে বসতে বলা হল। মিনিট পনেরো পরে ডাকা হল একটি ঘরে।
আরও পড়ুন: ট্রেন রুখতে গিয়ে মদ্যপের মৃত্যু রঘুনাথগঞ্জে
সেই ঘরে এক জন বসে ছিলেন। তিনি গৌতম মুখোপাধ্যায় বলে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘‘এখানে সব ধরনের চাকরি হয়। আপনাকে আমরা মেট্রো রেলের টিকিট কাউন্টারে চাকরি দেব। তার জন্য ২০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে। কলকাতায় মেট্রো রেলের ইউনিয়নকে দিতে হবে ৫০ টাকা। আর ৩০০০ টাকা গচ্ছিত রাখতে হবে। তবে সেটা আপনি চাকরিতে যোগ দেওয়ার দিন পনেরোর মধ্যে পেয়ে যাবেন। টাকা দিলে দু’দিনের মধ্যে চাকরি হবে। মাসে মিলবে ১৭ হাজার টাকা।’’
প্রশ্ন করা হল— মেট্রো রেলে চাকরি পাওয়া কি এতই সহজ! আর আদৌ কি মেট্রো এত লোক নেয়? এত দ্রুত চাকরি হয়? গৌতমের সটান জবাব— ‘‘আমরা সব পারি।’’ যদিও ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই পথে পা বাড়িয়ে বোকা বনেছেন অনেকেই। আদতে এটি প্রতারণার ছক।
সোমনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা প্রতারণা করেন না। তাঁর দাবি, অমৃত গ্রুপ নামে একটি সংস্থার মালিক তিনি। রানাঘাট স্টেশনের কাছেই তাঁদের অফিস। পুলিশের অনুমতিও আছে। যদিও মহকুমা পুলিশের এক অফিসার জানাচ্ছেন, এমন সংস্থাকে অনুমোদন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এর আগে ভিন্ জেলার এক তরুণের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
তবে পুলিশের দাবি, এ রকম প্রতারণা চক্র হাতেনাতে ধরা বেশ কঠিন। কারণ, এরা এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। কাগজে বিজ্ঞাপন দেয়, ফোনে কর্মহীন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কোনও একটা বাড়িতে দিন সাতেক বসে টাকা তুলে নেয়। পরে আর সেই বাড়িতে গেলে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ বার ঘুঘু ফাঁদে পড়বে, না পাখি উড়ে যাবে, তা পুলিশের কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy