বিজেপির পতাকা হাতে সমর ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই বিজেপিতেই যোগ দিলেন করিমপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। বুধবার হাওড়ায় বিজেপির একটি অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। বেশ কিছু দিন ধরে বিজেপির সঙ্গে গা-ঘেঁষাঘেঁষির অভিযোগে সিপিএম তাঁকে আগেই বহিষ্কার করেছিল।
নদিয়ার আরও বেশ কিছু জায়গার মতো করিমপুরেও গত দু’বছরে যথেষ্ট শক্তিবৃদ্ধি করেছে বিজেপি। দীর্ঘদিনের বাম-গড়ে বস্তুত সিপিএম সমর্থকদের একটা বড় অংশই বিজেপিকে পুষ্ট করেছে এবং করছে। সেই হাওয়া বুঝে সমর ঘোষও সে দিকে ঝুঁকেছেন বলে এলাকার অনেকের ধারণা। ২০১৬ সালের ভোটে তিনি তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। মহুয়া সাংসদ হয়ে যাওয়ায় এই কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন আসন্ন। সিপিএমের হয়ে লড়লে কার্যত জেতার কোনও আশা নেই বুঝেই সমর পদ্মে পা রেখেছেন বলে তৃণমূলের একটি অংশের দাবি। যদিও বিজেপি তাঁকে টিকিট দেবে তার কোনও নিশ্চয়তা এখনও পর্যন্ত নেই।
এ দিন হাওড়ায় বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সংগ্রহ অভিযান প্রমুখ, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, সর্বভারতীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেননেরাও। বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছাড়াও কলাকুশলী ও বুদ্ধিজীবীরা বিজেপিতে যোগ দেন। দলের নদিয়া জেলা উত্তর কমিটির দুই সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য ও মৃগেন বিশ্বাসের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে সমর ঘোষ বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন।
বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার অভিযোগে গত জুনে জরুরি বৈঠকে সমরকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটি। জেলা নেতৃত্ব তা মেনে নেন। সমর পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দলেরই একটা অংশ সক্রিয় ভাবে তাঁকে হারানোর চেষ্টা করে। গত বারও একই ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সমর আরও দাবি করেন, দলবিরোধী কোনও কাজ তিনি করেননি। কোনও দলে যোগ দিয়ে সেই দলের পতাকাও ধরেননি। বিধানসভা ভোটের পর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সিপিএমের জেলা পরিষদ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
তবে সেই সময়েই বিজেপির উত্তর জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার জানিয়েছিলেন, সমরের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। এ দিন মহাদেবের অনুমতিতেই বিজেপির জেলা কমিটির দুই সদস্য মৃগেন বিশ্বাস ও শুভাশিস ভট্টাচার্য সমরকে সঙ্গে করে হাওড়ায় নিয়ে যান।
প্রশ্ন হল: এ কেমন দলবদল? বামপন্থী দল থেকে একেবারে রামপন্থী দলে? সমরের বক্তব্য, “বামপন্থা হোক বা ডানপন্থা, মানুষের উপরে তো কিছু নেই। সিপিএম আমাকে বহিষ্কার করেছে। মানুষের পাশে থাকতে ও তাঁদের জন্য কাজ করতেই বিজেপিতে এলাম।’’ তাঁর দাবি, তাঁর সঙ্গে বহু সিপিএম কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে চলে এসেছেন। সমর বলেন, ‘‘এখন রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস রুখতে বিজেপিই একমাত্র দল। আসন্ন উপ-নির্বাচনে বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে, তা নেতৃত্ব ঠিক করবেন। তাঁরা আমায় যে ভাবে কাজে লাগাবেন, আমি সেই ভাবেই কাজ করব।”
সিপিএমের করিমপুর এরিয়া কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আসাদুল খান জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই সমর বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। সেই কারণেই নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে পার্টির গঠনতন্ত্রের ১৯ নম্বর ধারার ১৩ নম্বর উপধারা মোতাবেক তাঁকে দল থেকে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়েছে। আসাদুলের দাবি, ‘‘সেই অভিযোগ যে ঠিক ছিল, তা আজ প্রমাণ হয়ে গেল। এই দলবদলে কার লাভ হল জানা নেই, তবে সিপিএমের ক্ষতি হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy