রক্তাক্ত: বোমায় জখম বাবলু ঘোষ। শুক্রবার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
পঞ্চায়েতউত্তেজনা ছিলই। বোর্ড গঠনে মরিয়া তৃণমূল এবং বিজেপি শক্তি সঞ্চয়ের প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছিল না। আজ, শনিবার ভীমপুর থানার বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। শুক্রবার আমঝুপি গ্রামে বোমা ফেটে জখম হলেন চার জন। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আহতদের এক জন বহিরাগত। তাঁর দু’টি হাতের অনেকটা অংশ উড়ে গিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “বোমা বাঁধতে গিয়েই চার জন আহত হয়েছেন।” তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির লোকেরাই বোমা বাঁধছিল। যদিও বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূল বোমা মেরেছে। এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ওই এলাকায় ঢোকা-বেরনোয় নজরদারি চলছে। বড়সড় অশান্তির আশঙ্কায় রয়েছেন গ্রামবাসী।
বোমায় আহতেরা কোন দলের, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূলের দাবি, আহতেরা সকলেই বিজেপির কর্মী। এদের মধ্যে বাবলু ঘোষ নামে এক বহিরাগত রয়েছে। পুলিশের দাবি, বাবলু কুখ্যাত দুষ্কৃতী এবং বোমা বাঁধার জন্যই তাঁকে আনা হয়েছিল। তাঁর হাতই সবচেয়ে বেশি জখম হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তেরও দাবি, “আহতদের মধ্যে এক জন বিজেপির চিহ্নিত দুষ্কৃতী। বোমা বাঁধতে গিয়ে তার দুটো হাতই জখম হয়েছে।”
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার দাবি করেছেন, “বাবলু আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। মাঠ থেকে অন্যদের সঙ্গে ফিরছিলেন। তখনই তৃণমূলের লোকজন তাঁদের দিকে বোমা ছোড়ে।”
বাবলু যে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তাঁর নাম তারাপদ ঘোষ। তিনি বিজেপি কর্মী হিসাবেই পরিচিত। বিজেপির দাবি, আহত বাকি তিন জনও তাদের কর্মী। কিন্তু তাঁরা কেউ বোমা বাঁধছিলেন না। মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন বাবলু। সেই সময়ে তৃণমূল বোমা মারে।
অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের জেরে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। অগস্টের শেষ দিকেই বাগবেড়িয়ায় বোর্ড গঠনের কথা ছিল। সেই সময়েও দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি ও ঝামেলায় তা ভেস্তে যায়। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, সেই সময়ে বিজেপির তাড়া খেয়ে এলাকাছাড়া হতে হয়েছিল তৃণমূলকে। তার পরে দুই পক্ষই বড় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এলাকায় প্রচুর অস্ত্র ও বোমা মজুত করা হয়েছে। দিন কয়েক আগেই ওই এলাকা থেকে ১৩টি সকেট বোমা উদ্ধার হয়েছে।
ভীমপুরের এই পঞ্চায়েতে ১৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটিতে এবং বিজেপি পাঁচটিতে জয়ী হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, গণনার সময়ে তৃণমূলের লোকেরা তাদের হটিয়ে ছাপ্পা দিয়ে জিতেছে। সেই কারণেই এলাকার মানুষ তৃণমূলকে বোর্ড গঠন করতে দিতে চান না। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তৃণমূল বোর্ড গঠনে বদ্ধপরিকর। ফলে অশান্তির আশঙ্কায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বাগবেড়িয়া এবং আশপাশের ভাতশালা, ময়দানপুর, ট্যাংরা, কুলতালা, করশোন, আমঝুপি গ্রামে মোতায়েন থাকবেন ১৫ জন করে সশস্ত্র পুলিশকর্মী। সঙ্গে এক জন করে অফিসার। পঞ্চায়েতের দু’শো মিটার এবং একশো মিটারের মধ্যে থাকবে দু’টি ড্রপগেট।
সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো সশস্ত্র পুলিশকর্মী ও দুশো সিভিক ভলান্টিয়ার এলাকায় থাকবেন। থাকবেন পাঁচটি থানার ওসি-রা, ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “বোর্ড গঠন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy