কৃষ্ণ জোয়ারদার আর্য। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অন্য দিকে কংগ্রেসের চার বারের জয়ী সাংসদ অধীর চৌধুরী। মিডিয়ার আলোও বরাবরই ছিল তাঁদের ঘিরে। এমন দ্বৈরথের মাঝে পড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়ার কথা ছিল বিলকুল অপিরিচিত প্রার্থী বিজেপি’র কৃষ্ণ জোয়ারদারের। জিততে পারেনি ঠিকই। তবে, দুই প্রবল প্রতিপক্ষের ভোটযুদ্ধের ফাঁক গলে ভোট কুড়িয়েছেন গত বারের চেয়ে অন্তত তিন শতাংশ বেশি।
অধীর চৌধুরীর ‘খাসতালুক’ বহরমপুর শহরেও তৃণমূলকে পিছনে ফেলে দিয়েছে কৃষ্ণের ভোটরথ! বহরমপুর পুরসভা এলাকায় প্রাপ্ত বৈধ ভোটের সংখ্যা ১০০২৪৭। তার মধ্যে অধীর চৌধুরী একাই পেয়েছেন ৭৫৯৩৪। শতকরা হিসাবে প্রায় ৭৬ শতাংশ। তৃণমূলের থেকে শতকরা প্রায় এক ভাগ বেশি পেয়ে কৃষ্ণের ঝুলিতে জমেছে ১১০৮১ ভোট।
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল শতকরা মাত্র সাত শতাংশ ভোট। এ বার তা বেড়ে হয়েছে শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ তিন শতাংশ বেশি ভোট।
চেনা দূরের কথা, প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে পর্যন্ত বিজেপি’র মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও নেতা-কর্মীও কৃষ্ণ জোয়ারদারের নামটি শোনেননি। সেই প্রার্থীর পক্ষে এত ভোট? বিজেপি’র মুর্শিদাবাদ জেলা (দক্ষিণ) সভাপতি, তথা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট গৌরীশঙ্কর ঘোষ দাবি করেছেন, ‘‘সারা দেশের নিরিখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এ জেলায় অনেক বেশি, বলতে পারেন, সংখ্যাগুরু। অপপ্রচার সত্ত্বেও মোদীজির উন্নয়নের গুণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে বিজেপি’র গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। না হলে এ জেলায় প্রায় সাত লাখ ভোট বিজেপি কখনও পায়!’’ নিজের পূর্বতন বিধানসভা কেন্দ্র কান্দিতে তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অধীর চৌধুরীর থেকে প্রায় ৩৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। কেবল বহরমপুর বিধানসভার ক্ষেত্রে অধীর ও অপূর্বর মধ্যে ভোট ব্যবধান ৮৯ হাজার। তার জন্য বিজেপি ঝড়কে দায়ি করেছেন অপূর্বের নির্বাচনী এজেন্ট অরিত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও অমিত সাহের অসত্য প্রচারের ফলে ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটেছে। তার ফলে হিন্দুপ্রধান বড়ঞা, রেজিনগর বহরমপুরের মতো এলাকায় বিজেপি বেশি ভোট টেনেছে।’’ যা শুনে হাসছেন বিজেপি সভাপতি।
বহরমপুর লোকসভায় গত বারের থেকে প্রায় শতকরা পাঁচ ভাগ কম ভোট পেলেও পঞ্চমবারের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন অধীর চৌধুরী। নিজের ভোট কমে যাওয়া এবং বিজিপি-তৃণমূলের ভোট বৃদ্ধির জন্য তিনি তৃণমূলের ‘অসত্য’ প্রচারকেই দায়ি করেছেন তিনিও। তাঁর কথায়, ‘‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থের কথা ভেবে বহরমপুরে সেনা নিয়োগ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট কেন্দ্র খোলা হয়েছে, তবুও আমার বিরুদ্ধে বিজেপি ঘনিষ্ঠতার লাগাতার মিথ্যা প্রচার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশকে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। তারই ফলে বিজেপি’র বাড়-বৃদ্ধি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy