হুমায়ুন কবীর। নিজস্ব চিত্র
দেড় দশক আগের কথা। শরিয়তি আইনের সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করে একটি পুস্তিকা লিখেছিলেন মুর্শিদাবাদের সিপিএম সাংসদ মইনুল হাসান। ধর্মীয় বিধান সংস্কারের ওই আকাঙ্খা তাঁর ভোটভাগ্যে সে বার কাল হয়েছিল।
সিপিএম প্রার্থী মইনুল হাসানের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটযুদ্ধে পুস্তিকাটিই ‘ইস্যু’ করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেন। তাতেই কিস্তিমাত। শতকরা ৭৫ ভাগ মুসলিম ভোটার প্রভাবিত মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে এ বারের ধর্মীয় ইস্যুই সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজ্জা খানকে চতুর্থ স্থানে ঠেলে দিয়েছে। সভায় সভায় মমতা তুলে ধরেছিলেন নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি-র কথা। সীমান্ত ঘেঁষা জেলায় সেই নাগরিক পঞ্জীর ভয়ই তাদের কাল হয়েছে বলে মনে করছে দলের একাংশ। সন্ত্রস্ত হিন্দু ভোট ভরে দিয়েছে বিজেপির ভোট-বাক্স। রাজনীতির কারবারিদের অনেকেই মনে করছেন, সিপিএমের হিন্দু সমর্থেকারও ওই ইস্যু আঁকড়েই এ বার পদ্মে ভোট দিয়েছেন।
এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেন পেয়েছিলেন শতকার ৩১.৭১ ভাগ ভোট। বদরুদ্দোজ্জা খান শতকরা ৩৩.১৬ শতাংশ ভোট। মাত্র দেড় শতাংশ ভোটের ব্যবধানে সাংসদ হয়েছিলেন বদজরুদ্দোজ্জা। তিনিই এ বার ভোট ময়দানে দাঁড়াতেই পারলেন না। শতকরা মাত্র ১২.৪৩ ভাগ ভোট পেয়ে সিপিএম এ বার চতুর্থ স্থানে চলে গিয়েছে। ২০১৪ সালের শতকরা ৭.৮৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এ বার প্রায় শতকরা ১০ ভাগ বাড়িয়ে নিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। শতকরা হিসাবে বিজেপি প্রার্থী ‘বহিরাগত’ হুমায়ুন কবীর পেয়েছেন ১৭.০৪ শতাংশ ভোট।
এ কেন্দ্রে এ বার সিপিএমের মতোই পতন ঘটেছে কংগ্রেসেরও। গত বারের মতো এ বারও দ্বিতীয় স্থান দখলে রাখলেও শতাংশের নিরিখে অনেকটাই ভোট কমেছে তাদের। এ বারের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা শতকরা হিসাবে পেয়েছেন প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ ২০১৪ সালের থেকে প্রায় ৫.৭১ শতাংশ কম। তৃণমূলের সাংসদ আবু তাহের খানের নির্বাচনী এজেন্ট মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘২০১৪ সালের ভোটে সংখ্যালঘু প্রধান মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর মিলিয়ে তিনটি জেলার মোট ৬টি আসনের মধ্যে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে তৃণমূল সব থেক বেশি ভোট (২২%) পেয়েছিল। এ বার বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক প্রচারের মেরুকরণের প্রতিক্রিয়ার সুফল পেয়েছে তৃণমূল।’’
মেরুকরণের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভূমিকার কথাও কানে আসছে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলে এনআরসি’র ঠেলায় সংখ্যালঘুদের বাংলাদশে পালাতে হবে। তৃণমূল নেত্রীর ওই প্রচার ৭৫ ভাগ সংখ্যালঘু প্রভাবিত মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে খুব কাজ দিয়েছে।’’ প্রথম থেকে চতুর্থ হয়ে যাওয়া বদরুদ্দোজা খানের ব্যাখ্যা, ‘‘সাম্প্রদায়িক প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের ভোটারদের একটি অংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার গড়বে ভেবে অন্য অংশ কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে।’’
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘মোদীর সুশাসনে ভোট বেড়েছে বিস্তর। ছ’ মাস পর ভোট হলে দেখা যাবে আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।’’ কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর সাম্প্রদায়িক প্রচারের কারণেই এই ফল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy