Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সৌজন্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাটল দিন

মুখোমুখি দেখা হল দু’জনের। হাত বাড়িয়ে দিলেন কল্যাণ। করমর্দন করলেন মহুয়ার সঙ্গে। আন্তরিক ভাবে হাত বাড়ালেন মহুয়াও।

জয়ের হাসি: কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

জয়ের হাসি: কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ী তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার ও সম্রাট চন্দ শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

গণনা কেন্দ্র থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসছেন গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা দীর্ঘদেহী যুবক। মুখে স্নিগ্ধ হাসি। দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি প্রায় পঁচাত্তর হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যোগাযোগ ভবনে বসে আছেন কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের আর এক পরাজিত প্রার্থী সিপিএমের শান্তনু ঝা। এক মনে মোবাইলে ফেসবুক ঘাঁটছেন। সেই যুবক বিজেপি-প্রার্থী কল্যাণ চৌবের সঙ্গে শান্তনুর সৌজন্য বিনিময় হল। বাইরে তখন সংবাদমাধ্যমের ভিড়। কল্যাণ তাদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন সাবলীল ভাবে। দাবি করলেন, প্রায় চারশো বুথে তাঁরা কোনও এজেন্ট দিতে পারেননি।

কল্যাণ যখন বেরোচ্ছেন, সেই সময়ে একগাল হাসি নিয়ে হেঁটে আসছেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র। মুখোমুখি দেখা হল দু’জনের। হাত বাড়িয়ে দিলেন কল্যাণ। করমর্দন করলেন মহুয়ার সঙ্গে। আন্তরিক ভাবে হাত বাড়ালেন মহুয়াও। কল্যাণ ‘‘বেস্ট অফ লাক’’ বলে যোগাযোগ ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন। আসার পথে পাশে দাঁড়ানো সাংবাদিকদের বললেন, ‘‘মহুয়া মৈত্র খুব ভাল মহিলা। মহিলারা যত এগিয়ে আসবেন, দেশের পক্ষে ততই ভাল।’’ দুপুরে একান্ত আলাপচারিতায় মহুয়াও বলেছেন, ‘‘কল্যাণবাবুর সঙ্গে কথা হল। খুব ভদ্র, মিষ্টি স্বভাবের মানুষ।’’

প্রথম রাউন্ডেই মহুয়া আঠারো হাজার আটশো ভোটে এগিয়ে যান। খোশগল্প শুরু করে দেন সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝা-র সঙ্গে। কল্যাণ চৌবে তখন গণনা কেন্দ্রের নীচের তলায় গ্রিলে হেলান দিয়ে খুলে বসেছেন হাতের ডায়েরি। এর মধ্যে কালীগঞ্জের এক কাউন্টিং এজেন্ট এসে দাঁড়াতেই মহুয়া একগাল হেসে বললেন, ‘‘অসাধারণ কাজ করেছেন। কালীগঞ্জের মার্জিন খছি চল্লিশে দাঁড়াবে। পরে আপনাদের সঙ্গে খুব মজা করব।’’

সকাল থেকে কিছু না খেয়ে ছিলেন মহুয়া। অসুস্থ বোধ করায় ফোনে খাবার আনতে বলেন। সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝায়ের কাছে জানতে চান, ‘‘আপনি খাবেন তো স্যর?’’ মৃদু হেসে শান্তনু না জানিয়ে দেন। তবে দু’জনে একসঙ্গে অনেক ছবি তোলেন। এর কিছু ক্ষণ পরে জয় নিশ্চিত বুঝে দলীয় কর্মীর মোটরবাইকের পিছনে বসে বেরিয়ে যান মহুয়া।

এ দিন রানাঘাট কলেজের গণনাকেন্দ্রে মিডিয়া সেন্টারে বসানো টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। দিনভর প্রত্যয়ী লেগেছে বিজেপি প্রার্থীকে। সংবাদমাধ্যমের আবদার মেনে দুই আঙুলে ‘ভিকট্রি সাইন’ দেখিয়ে পোজ দিলেন। সকাল আটটার মধ্যে গণনাকেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছিলেন রূপালী বিশ্বাস। প্রথম থেকেই পিছিয়ে যেতে থাকেন। তৃতীয় রাউন্ডের পর দলীয় শিবিরের দিকে হাঁটা দেন। কোনও মন্তব্য করেননি। দলের নেতারাই তাঁকে বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া দলীয় দফতরে বিশ্রাম নিতে বলেন। সেখানে গেলেন। এরপর আর গণনাকেন্দ্রে যাননি।

ভোটে তৃতীয় স্থানে নেমে গেলেও গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রয়ে গেলেন সিপিএমের প্রার্থী রমা বিশ্বাস। দলীয় শিবিরে কর্মীরা খেয়েছেন কি না তার খোঁজও নিলেন। মাঝে সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘‘আমাদের লড়াই চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE